মহানগর ডেস্ক: রাজধানীতে এবার নামানো হল ১৫ কোম্পানি আধাসেনা। দিল্লিতে কৃষকদের ট্র্যাক্টর মিছিলের পরেই লালকেল্লার নিরাপত্তা খতিয়ে দেখতে দিল্লি পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভল্লা এবং দিল্লির পুলিশ কমিশনার এসএন শ্রীবাস্তব। বৈঠক শেষেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
দিল্লিজুড়ে যেভাবে কৃষকরা বিক্ষোভের নামে ‘তাণ্ডব’ চালিয়েছেন তাতে ক্ষুব্ধ অমিত শাহ। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তার দিকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল কেন্দ্র। সূত্রের খবর ছিল প্রয়োজনে আধাসেনাও নামানো হতে। সেই আশঙ্কা সত্যি করেই ১৫ কোম্পানি আধাসেনা দিল্লির রাজপথে নামাল কেন্দ্র। ইতিমধ্যেই সিঙ্ঘু, টিকরি এবং দিল্লি সীমান্তবর্তী এলাকায় আজ রাত বারোটা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা।
প্রসঙ্গত, সকাল থেকেই দিল্লির দিকে ট্র্যাক্টর নিয়ে রওনা হয়েছিলেন কৃষকরা। বেলা গড়াতেই লালকেল্লায় পৌঁছে যায় কৃষকদের মিছিল। শুধু পৌঁছনোই নয়, লালকেল্লায় পৌঁছে কৃষক আন্দোলনের পতাকা উড়িয়ে দিলেন তাঁরা। সংঘর্ষ, কাঁদানে গ্যাস, লাঠি চার্জ। কিছু দিয়েই পুলিশ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারল না প্রতিবাদী কৃষকদের। তিন সীমানায় সব ব্যারিকেড ভেঙে চুরমার হল মঙ্গলবার। পুলিশের ঘোষিত পথে গেল না হাজার হাজার ট্র্যাক্টর। পথ পাল্টে লালকেল্লায় গিয়ে কৃষকদের মধ্যে থেকে আওয়াজ উঠল ‘অকুপাই দিল্লি’। কিন্তু এর মধ্যেই এল মৃত্যুর খবরও। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর ট্র্যাক্টর উল্টে মারা গেলেন এক কৃষক। গাজিপুর থেকে দিল্লির আইটিও-এর দিকে যাওয়ার পথে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্র্যাক্টর উল্টে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যায় ওই কৃষক।
পুলিশের ঘোষণা ছিল, মঙ্গলবার সকাল ১২ টা নাগাদ কৃষকদের মিছিল নির্দিষ্ট তিনটি রুটে গিয়ে আবার উৎসস্থলে ফিরে আসবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটল উল্টো। সকাল ৮টা থেকে লাগামছাড়া গতিতে দিল্লির দিকে ধেয়ে আসতে থাকে মিছিল। পুলিশের বাধা কেউ মানেননি। আর তাই নিয়ে উত্তপ্ত হয়েছে দিল্লির নয়ডা মোড়, আইটিও মোড়, এসবিটি এলাকা।
একাধিক ফুটেজে দেখা গিয়েছে, কৃষকদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটাচ্ছে পুলিশ। চলছে লাঠি। পাল্টা কৃপাণ হাতেও কৃষকদের দেখা গিয়েছে। সকাল ১০টায় নয়ডা মোড়ের চিত্রটা ছিল এমনই। পুলিশ লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি।
আইটিও মোড়ে দেখা গিয়েছে, কীভাবে ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যেতে চাইছেন কৃষকরা। সেখানেও বিপুল সংখ্যায় ট্র্যাক্টর এসে পড়ে। মূলত দিল্লির সীমানা এলাকায় বেশি পুলিশ মোতায়েন থাকার কারণে দিল্লির অন্দরে পুলিশের আঁটুনি দূর্বল হয়ে পড়েছিল। সেই কারণে বিনা বাধায় এগিয়ে যেতে থাকেন কৃষকরা। আইটিও মোড় থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে দিল্লি পুলিশের সদর দফতর। সেখানে গিয়ে প্রতিবাদরত কৃষকরা হাজির হবেন কি না, তা নিয়ে বাড়তে থাকে চিন্তা।
কৃষকনেতা রাকেশ টিকায়েত জানিয়েছেন, ‘‘দিল্লিতে পৌঁছে গেলেও সেখানে বসে আন্দোলনের কোনও পরিকল্পনা বা লালকেল্লা যাওয়ার কোনও সিদ্ধান্ত কৃষক সংগঠনের পক্ষ থেকে নেওযা হয়নি। কৃষকরা দিল্লি যাবেন, আবার শান্তিপূর্ণ পথে ফিরে এসে পূর্বে যেখানে আন্দোলন করছিলেন, সেখানেই আন্দোলন করবেন।’’
কিন্তু খুব একটা আত্মবিশ্বাসী শোনায়নি রাকেশ টিকায়েতের গলাও। তিনিও বুঝতে পেরেছেন, এই বিপুল জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। সেই কারণেই দিল্লি পুলিশও পড়ে প্রবল চ্যালেঞ্জের মুখে। আইটিও মোড়ে একটি বাস দখল করে নেন কৃষকরা। সেখানে কৃষক-পুলিশের মধ্যে শুরু হয় সংঘর্ষ। লাঠি হাতে দু’পক্ষই তেড়ে আসে। কিন্তু বিপুল সংখ্যায় কৃষকদের উপস্থিতি থাকায় পুলিশকে রীতিমতো অসহায় দেখায় দুপুরের এই সংঘর্ষে। এই পরিস্থিতিতে দিল্লির মেট্রো পরিষেবা কিছু অংশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।