মহানগর ওয়েবডেস্ক: বাংলার রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের বোধহয় সাংঘাতিক কোনও অভিশাপ দিয়েছেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। নইলে তাঁকে নিয়ে কথা বলতে গেলেই কেউ না কেউ আলটপকা মন্তব্য কীভাবে করে বসেন? শুরুটা করেছিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সেই ‘রোগ’ সংক্রামিত হয়েছিল খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যেও। যার সর্বশেষ উদাহরণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। গতকাল এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়েছে রাজা রামমোহন রায় ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে ঘেঁটে ঘ করে ফেলেন তিনি। যা নিজে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হল মস্করা ও ট্রোলের বন্যা। শেষে বাবুলও বাধ্য হয়ে নিজের ভুল স্বীকার করে নেন। একই সঙ্গে এমন একটা কথা লেখেন যা দ্বিগুণ হাস্যরসের জন্ম দেয় নেটপাড়ায়। আসানসোলের সাংসদ বলেন, রামমোহন রায় নাকি তাঁকে এসএমএস করে ক্ষমাও করে দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার কলাকুশলীদের নিয়ে বিজেপির অরাজনৈতিক সংগঠন খোলা হাওয়ার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। গতকাল আবার ২৬ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিন। ফলে বাবুলের বক্তব্যে এদিন উঠে আসে বিদ্যাসাগরের কথা। তবে সে কথা যে এমন কথা হবে তা ভাবতে পারেনি কেউ। বক্তব্যের মাঝে হঠাৎ বাবুল বলে বসেন দেশ থেকে সতীদাহ প্রথা বিলোপ করেছিলেন বিদ্যাসাগর। অর্থাৎ রাজা রামমোহনের সঙ্গে গুলিয়ে একেবারে গণ্ড রচনা তৈরি করলেন তিনি। বাবুল সাংবাদিকদের সামনে বলেন, ‘সতীদাহ প্রথার বিলোপ, বিধবা বিবাহ চালু করেছিলেন বিদ্যাসাগর। তাঁর জন্মদিনে একটা সংগঠন শুরু হচ্ছে, এটা অনেক বড় ব্যাপার।’
ব্যাস, বাবুলের এই কথা বলার পরই হাসির রোল ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তবে কিছুক্ষণ পর নিজের ফেসবুকেই একটি পোস্টের মাধ্যমে নিজের ভুল স্বীকার করে মারাত্মক শ্লেষাত্মমূলক কটাক্ষ করেন নেটিজেনদের। নিজের পোস্টের শুরুতেই ‘হা হা’ লিখে স্পষ্টত বুঝিয়ে দেন, এই ভুল নিয়ে বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত নন তিনি। বরং বিতর্ক ধামাচাপা দিতে এবং পাল্টা আক্রমণ করতেই এই পোস্ট করছেন তিনি। বাবুল লেখেন, ‘সত্যি একটা ভুল তো করেছি। বিদ্যাসাগর নিয়ে বলবার সময়ে বিধবা বিবাহ বলতে গিয়ে বিধবা বিবাহ তো বলেছি, তার সঙ্গে সতী প্রথার অবলুপ্তিও জুড়ে দিয়েছি। এটা একটা কেয়ারলেস ভুল ছিল। কিন্তু এবার কী হবে বলুন তো। আমি কি বাঁচার, নিশ্বাস নেওয়ার অধিকার হারিয়ে ফেললাম?’ তারপর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী লেখেন, ‘রামমোহন রায় অলরেডি আমাকে মাফ করে দিয়ে হাসিমুখে এসএমএস করেছেন। আশীর্বাদও করেছেন।’
বাবুলের আরও খোঁচা, ‘আপনারাও মাফ করে ফেলুন বলতে খুব ইচ্ছে করছে, কিন্তু পারবেন কি? তবে আর যাই করি না কেন, মানুষের ক্ষতি কিন্তু করি না, বৃষ্টির দিনে চা-তেলেভাজার সাথে ডিসকাস করার মতো একটা টপিক তো পেলেন।’