সিরাজুল ইসলাম: কলকাতা হাইকোর্টে তিনি দীর্ঘদিন ধরে আইনি প্রাকটিস করছেন। আইনজীবী হিসেবে বর্ষীয়ান এই মানুষটি স্বনামধন্য হতে পেরেছেন তাঁর পেশার সূত্র ধরে। পুরসভা ভোটের হাত ধরে তাঁর সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ। বাম আমলে প্রথমবারের জন্য কলকাতা পুরসভা ভোটে লড়ে তিনি হয়ে যান মেয়র। তিনি বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। পরে তৃণমূল কলকাতা পুরসভা দখল করলে তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে একটু দূরে সরে যান। দীর্ঘদিন পর আবার রাজনীতির আসরে নামেন। বাম-কংগ্রেস জোটপ্রার্থী হিসেবে গত লোকসভা ভোটে তিনি যাদবপুর কেন্দ্রে লড়াই করেন। তৃণমূলের ভরা বাজারে তাঁর জয় নিয়ে প্রায় নিশ্চিত ছিল রাজনৈতিক মহল। মাটি কামড়ে পড়ে থেকেও শেষপর্যন্ত তিনি জয় পাননি। তিনি হেরে যান তৃণমূলের মিমি চক্রবর্তীর কাছে। লোকসভায় তাঁর না যাওয়া হলেও এবার তিনি যাচ্ছেন রাজ্যসভায়। প্রতিদ্বন্দ্বী নির্দল প্রার্থী দীনেশ বাজাজের মনোনয়ন বাতিল হয়ে যাওয়ায় আর তাঁকে ভোটাভুটির মুখে পড়তে হচ্ছে না। বাংলা থেকে তিনি পঞ্চম প্রার্থী হিসেবে যাচ্ছেন রাজ্যসভায়।
শেষ ল্যাপে গতি বাড়িয়ে হাফাতে হাঁপাতে হাঁপাতে দৌড়ে এসে দাখিল করেছিলেন মনোনয়ন। প্রয়োজনীয় ভোট তাঁর অনুকূলে নেই জেনেও তিনি আসরে নেমেছিলেন। রাজ্যসভার পঞ্চম আসনে তাই ভোটাভুটি অনিবার্য হয়ে পড়ে। সেই নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাখিল করা দীনেশ বাজাজের মনোনয়ন বাতিল হয়ে গেল। স্ক্রুটিনিতে দেখা যায়, মনোনয়নের সঙ্গে তিনি বাধ্যতামূলক যে হলফনামা দিতে হয়, তা দেননি। মঙ্গলবার স্ক্রুটিনিতে তাই বাতিল হয়ে গেল নির্দল প্রার্থী দীনেশ বাজাজের মনোনয়ন। ফলে আর ভোট হচ্ছে না পঞ্চম আসনে। বাম-কংগ্রেস জোট হিসেবে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে আর প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হচ্ছে না। তৃণমূলের চার প্রার্থীর সঙ্গে তিনি পৌঁছে যাচ্ছেন রাজ্যসভায়।
নির্দল প্রার্থী দীনেশ বাজাজের মনোনয়ন বাতিল হয়ে যাওয়ার পর তাঁর জয় নিশ্চিত হতেই ‘মহানগর’-এর তরফে আমরা যোগাযোগ করি বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের সঙ্গে। প্রতিদ্বন্দ্বী নির্দল প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা আইনসঙ্গত কারণে নির্দল প্রার্থীর মনোনয়নে বিভিন্ন ত্রুটি দেখিয়েছি। তার ভিত্তিতে নমিনেশন খারিজ হয়েছে।’ রাজ্যসভার মনোনয়ন দাখিল করতে হলে ১০ জন বিধায়কের সই দরকার প্রস্তাবক হিসেবে। নির্দল প্রার্থী হিসেবে দীনেশ বাজাজ মনোনয়ন দাখিল করলেও তিনি কি আদতে ‘নির্দল’ হতেন? এই প্রশ্নের উত্তরে বিকাশবাবু বলেন, ”তৃণমূলের বিধায়করা ছিলেন তাঁর প্রস্তাবক। তৃণমূলের বিধায়করা যদি প্রস্তাবক হন, তা হলে তিনি নির্দল হন কী করে? ‘নির্দল’ তকমা তিনি মুখোশ হিসেবে সামনে রেখেছিলেন। নির্দল রাখার উদ্দেশ্য ছিল। বিজেপি’র সঙ্গে তৃণমূলের একটা গোপন বোঝাপড়া হয়েছিল। প্রয়োজনীয় ভোট না থাকায় তৃণমূলের নামে দিলে অসুবিধা হতো, নির্দল হলে সুবিধা হতো। তৃণমূলের পরিকল্পনা ছিল বিজেপি’র ভোট নেওয়া। টাকা দিয়ে বাম-কংগ্রেসের কিছু বিধায়ককে বিভ্রান্ত করে ভোট নেওয়া। মনোনয়ন বাতিল হওয়াতে তা ভেস্তে গেল। ফলে মুখরক্ষা হয়েছে তৃণমূলের।”
আইনজীবী হিসেবে যতটা বিখ্যাত তিনি, রাজনীতিক হিসেবে ততটা পরিচিত নন। তবুও এই ময়দানে তাঁর যতটা পরিচিতি আছে, তাতে তাঁর দিকে এখন কেউ আঙুল তোলার সাহস দেখান না। অত্যন্ত স্বচ্ছ তাঁর ইমেজ। গায়ে কালো গাউন চাপিয়ে তিনি আইনের সওয়াল করেছেন চিটফান্ড কেলেঙ্কারি নিয়ে। ভাঙড়ের পাওয়ার গ্রিড নিয়ে জমি কমিটির আন্দোলন, ভাবাদিঘি আন্দোলনে তিনি পাশে থেকেছেন সাধারণ মানুষের। পাইয়ে দিয়েছেন তাদের আইনি জয়। সেই মানুষটি এবার যাচ্ছেন সংসদের উচ্চকক্ষে। সেখানে আমরা কি নতুন রূপে দেখতে পাব বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমাকে মাঠে-ময়দানে, আইনি আদালতে এতদিন যে ভাবে দেখেছেন, সেই ভাবেই দেখবেন। আমাদের কাজ হচ্ছে, দেশের মানুষের জলন্ত সমস্যা, মানুষের ঐক্য, ধর্মনিরপেক্ষতা, সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে কথা বলা।’