ডেস্ক: কাগজে কলমে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস বিরোধীদলের ভুমিকা পালন করলেও বাস্তবের ছবিটা অন্য কথা জানান দেয়। সবং বিধানসভা উপনির্বাচনের সময় থেকেই রাজ্যে বিজেপির যে আস্ফালনের ধারণাটা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মনে তৈরি হয়েছিল, তা প্রমাণ হয়ে যায় উলুবেরিয়া ও নোয়াপাড়া উপনির্বাচনে। বিজেপির ভোট যে বিপুল হারে বেড়েছে তা অস্বীকার করা মূর্খের স্বর্গে বাস করার মতই হবে। কিন্তু এ সবকিছু সত্ত্বেও শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটবাক্সে তা কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি। ফলে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন শাসকদলের বিরুদ্ধে বাকি প্রত্যেকটি দলের জন্য অ্যাসিড টেস্ট নিয়ে অপেক্ষা করছে। একদিকে যখন দিল্লি দখলের উদ্দেশ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাকি আঞ্চলিক দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে ফেডারেল ফ্রন্ট গড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখনই বিজেপি সাধারণ সম্পাদক রাহুল সিনহা পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃনমূলকে পরাস্ত করতে সিপিএম ও কংগ্রেসের সঙ্গে মহাজোট গড়ার বার্তা দিলেন।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর গড় মুর্শিদাবাদে বিজেপির একটি বৈঠকে রাজ্যে বিজেপি দলগুলিকে এক ছাতার তলায় আসার ইঙ্গিত দেন রাহুল। মুখে অবশ্য একবারও সিপিএম বা কংগ্রেসের নাম উচ্চারণ করেন নি তিনি। কিন্তু রাহুলের বিরোধী জোটের ইঙ্গিত যে সেই বার্তাই বহন করছে তা জলের মতই স্বচ্ছ। কারণ, এই মুহূর্তে রাজ্যে বিরোধীদল বলতে বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেস ছাড়া আর কেউ নেই। রাহুল অবশ্যই এই দলগুলি বাদে অন্য কোনও দলের কথা এখানে বলতে চাননি। এদিন রাহুল বলেন, তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়তে সব রাজনৈতিক দলগুলিকে এক হতে হবে। তাহলেই তৃণমূলের পতনের পথ প্রশস্ত হবে।
এদিনের বৈঠকে রাহুল দাবি করেন, মহাজোট হলে তৃণমূল বিপাকে পড়বেই। যে দলের যেখানে শক্তি বেশি, সেখানে সেই দলের প্রার্থী দিতে হবে। অন্য দল যদি সেই প্রার্থীকে সমর্থন করে তবে জয়ের পথ প্রশস্ত হবেই। একই সঙ্গে তিনি এও স্বীকার করে নেন, সবদল এক না হলে তৃণমূলকে হারানো সম্ভব নয়। কোন দল, কোন প্রার্থী তা ভাবা চলবে না। সব দল এক হলে তবেই হারবে তৃণমূল।
রাহুল মুখে বিরোধীদের নিয়ে জোটের পক্ষে সওয়াল করলেও বাস্তবে তা কতটা রূপান্তরিত হতে পারে তা নিয়ে তর্ক হতে বাধ্য। একদিকে যখন বিজেপিকে পরাস্ত করতে দেশের সকল রাজ্যের সর্বস্তরের দলগুলি এক ছাতার তলায় আসতে চাইছে, সেই অবস্থায় রাহুলের এই স্বপ্নকে ‘অলীক’ অ্যাখা দিলে ভুল কিছু হয় না। কংগ্রেস যে কোনো অবস্থাতেই গেরুয়া শিবিরে ভিড়বে না তা চোখ বন্ধ করেই বলে দেওয়া যায়। অন্যদিকে, বামেরা যে ‘একলা চলো’ নীতি নিয়েছে তা পলিটব্যুরোর বিগত কয়েকটি বৈঠকে পরিস্কার। রাহুলের এই কথাতে আর একটি স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতদিন ধরে বিজেপি যে তৃণমূলকে একা পরাস্ত করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল তা সম্ভব না বুঝে সেই অবস্থান থেকেও পিছিয়ে এসেছে তারা। তা না হলে তৃনমূলকে হারাতে বিরোধীদের এক হওয়ার বার্তা কোনোদিনই দিতেন না রাহুল।