ডেস্ক: মুকুল রায় বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই একটা ট্র্যাডিশন স্পষ্টই চোখে পড়ছিল সকলের। তা হল বিক্ষুব্ধ তৃণমূলীদের বারংবার মুকুলের নিজের কাছে অর্থাৎ গেরুয়া শিবিরে কাছে টানার চেষ্টা। একদা দলের দক্ষ সংগঠক রূপে পরচিত মুকুল বরাবর দাবি করে এসেছেন যে, আরও অনেক রাঘব বোয়াল নাকি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপির দিকে পা বাড়িয়ে রয়েছেন এবং সময় হলেই তা প্রকাশ্যে আসবে। কিন্তু বাস্তব চিত্রটা এতদিন ছিল অন্যরকম। মুকুলের পুরনো দলের বহুদিনের চেনা ‘কলিগ’ শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দলের ভাঙনের ছবিটা সাফ হতেই সেই প্রশ্ন ঘুরে ফিরে এসে যাচ্ছে। তবে কি এবার শোভনও শাসকদলের উইকেট ফেলে বিরোধীদের মাটি শক্ত করার পথে। শোভনের ‘অশোভন’ বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন মুকুল। কিন্তু অবশেষে নীরবতা ভঙ্গ করলেন।
মুখ খুলে মুকুল রায় অবশ্য যে ধরণের ইঙ্গিত দিলেন তাতে এখনই আশাবাদী হতে পারছে না রাজ্যের বিজেপি শিবির। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একসময় ডান হাত রূপে পরিচিত ছিলেন মুকুল। তিনিও খুব ভাল করেই জানেন শোভন চট্টোপাধ্যায় মমতার অন্যতম ‘খাস’ লোক। শোভনের প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সোমবার রানাঘাটে মুকুল রায় বলেন, ”উনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ লোক। মমতার সমস্ত ও জানে। বহু নেতাই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। সেরকম হলে তৃণমূল দলটাই ভেঙে যাবে।” মুকুলের এই মন্তব্য খুব একটা সোজা চোখে দেখছে না রাজনৈতিক মহল। মুকুলের ‘সেরকম হলে তৃণমূল দলটাই ভেঙে যাবে’ বার্তা থেকে অনেকেই মনে করছেন তৃণমূলে ভাঙন ধরাতে এখনও সক্ষম নন তিনি।
অন্যদিকে, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিজেপি যোগের জল্পনা শুরু হতেই বোমা ফাটিয়ে দেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। মুকুলের সিদ্ধান্তে নোয়াপাড়া উপনির্বাচনে মঞ্জু বসুকে বিজেপি প্রার্থী ঘোষণা করে দেওয়ার পর তিনি যেভাবে মমতার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাতে রীতিমতো মুখে চুনকালি পড়ে গেরুয়া শিবিরের। কথায় বলে ‘নেড়া একবারই বেলতলায় যায়’। রাজ্য বিজেপি শিবিরও মঞ্জু বসু ঘটনার পর মমতা ঘনিষ্ঠ কোনও নেতাকে এনে ফের একই ভুল করতে চাইবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সুসম্পর্কের বিষয়ে ওয়াকিবহাল দিলীপ তাই সাফ জানিয়ে দেন, সব নোংরা আমরা নেব কেন? তাদের কাছেই থাক। আমরা তাদের নিয়ে নেব, এমন অবস্থা বিজেপির হয়নি।”
অর্থাৎ রাজ্য বিজেপির সভাপতির কথায় এটুকু স্পষ্ট যে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আপাতত কোনও সম্ভাবনা বা ইঙ্গিত কোনটাই শোভনের ক্ষেত্রে খাটছে না। দলের সঙ্গে শোভনের বনিবনা না হওয়ার বিষয়টি সংবাদমাধ্যমের দ্বারা প্রচারিত হলেও, এখনও পর্যন্ত শোভন চট্টোপাধ্যায় নিজে বা তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে বিষয়টি নিয়ে কেউ মুখ খোলেন নি। রাজ্য বিজেপির অন্যতম দুই স্তম্ভ মুকুল রায় ও দিলীপ ঘোষের মন্তব্য বিশ্লেষণ করলে জলের মতো স্বচ্ছ হয়ে যায় যে, শোভনের বিজেপি যোগের কোনও সম্ভাবনা আপাতত নেই বললেই চলে।