নিজস্ব প্রতিবেদক, সিউড়ি ও বালুরঘাট: বাড়িতে চলছিল একমাত্র মেয়ের বিয়ের প্যান্ডেল তৈরির কাজ। অতিথিদের নিমন্ত্রণের পর্বও ততক্ষণে চুকে গিয়েছে। পাশাপাশি তাদের আপ্যায়নের খাবার দাবার কেনাকাটাও হয়ে গিয়েছিল। চলছিল শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। সেই সময় হঠাৎ করেই এসে হাজির পুলিশ। তাদের নির্দেশ পাত্রী নাবালিকা, তাই আটকাতে হবে এই বিয়ে। ঘটনাস্থল বীরভূম জেলার সদর মহকুমার সিউড়ি থানা এলাকার কেন্দুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বাগদীপাড়া। শুক্রবার যখন এই ছবি ধরা পড়েছে ঠিক তখনই এই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা আগে একই চিত্র ধরা পড়েছে উত্তরবঙ্গের এক গ্রামেও। দক্ষিন দিনাজপুর জেলার হিলি ব্লকের বানোরা এলাকায় রবিবার এক নাবালিকার বিয়ে আটকাতে সক্ষম হয়ে প্রশাসন ঠিক এইরকম ভাবেই। দুই জায়গাতেই অবশ্য পাত্রীর অভিভাবকদের কাছ থেকে পুলিশ মুচলেখা লিখিয়ে নিতে পেরেছে যে তারা তাদের মেয়ের ১৮ বছর না হলে বিয়ে দেবেন না। তবুও এরই মধ্যে প্রশ্নটা থেকে যাচ্ছে যে কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, সবুজসাথী থাকা সত্ত্বেও এই রাজ্যে কেন নাবালিকাদের বিয়ে দেওয়ার প্রবণতায় কোন দাঁড়ি পড়ছে না!
জানা গিয়েছে, রবিবার দক্ষিন দিনাজপুর জেলার সদর মহকুমার হিলি এলাকার উজ্জীবন সোসাইটি নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে খবর আসে বানোরা এলাকায় ষোলো বছরের এক নাবালিকার বিয়ে দিচ্ছে তার পরিবার। খবর পাওয়া মাত্রই উজ্জীবন সোসাইটির পক্ষ থেকে ঘটনার সত্যতা যাচাই করবার পর জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক সহ জেলা আইনি পরিষেবার সৌমেন্দ্রনাথ রায়কে জানানো হয়। এরপর হিলি থানা থেকে পুলিশ আধিকারিক সৌরেন দাস ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সঙ্গে আসেন উজ্জীবন সোসাইটির সদস্য দীপক ঘোষ, আইনি পার্শ্বসেবক বিজয় রায় সহ আরও অনেকে। এরপর সৌমেন্দ্রবাবুও আসেন ঘটনাস্থলে। সঙ্গে আসেন সিডব্লুসি দক্ষিণ দিনাজপুরের সদস্য সূরজ দাশ। নাবালিকার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের দীর্ঘ কাউন্সেলিং করে নাবালিকা বিয়ের কুফল বোঝানোর পর বিয়েটি বন্ধ হয়। সোমবার ওই নাবালিকাকে সিডব্লুসির সামনে পেশ করা হয়।
অন্যদিকে সোমবার এক নাবালিকা মেয়ের বিয়ের প্রস্তুতি চলছে সেই খবর যায় বীরভূমের সিউড়ির চাইল্ড লাইনের কাছে। সিউড়ি থানার পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। অল্প বয়সে বিয়ে দিলে মেয়েদের কি শারীরিক ক্ষতি হয় তা বোঝানো হয় ওই পরিবারকে। তারপর ‘মেয়ে পূর্ণবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেব না’ এই মর্মে নাবালিকার বাবার কাছ থেকে মুচলেখা লিখিয়ে নেওয়া হয়। বন্ধ হয় নাবালিকার বিয়ের অনুষ্ঠান।
জানা গিয়েছে, কেন্দুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বাগদীপাড়ার ওই নাবালিকা সিউড়ি শহরের বাণীমন্দির উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। আগামী শুক্রবার তার বিয়ে ছিল। পাত্রপক্ষ পুরন্দরপুরের বাসিন্দা। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সিউড়ি চাইল্ড লাইন সিউড়ি থানার পুলিশকে নিয়ে ওই স্কুলছাত্রীর বাড়িতে যায়। সেখানে গিয়ে তারা দেখেন বিয়ের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। ওই ছাত্রী বাবা কালো বাগদি এবং মা গায়ত্রী বাগদিকে বোঝানো হয় ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে মেয়ের বিয়ে দিলে তারা শারীরিক নানা সমস্যা হয় পরবর্তী সময়ে। ভুল বুঝতে পেরে ওই নাবালিকার পরিবার মুচলেকা দেয় যে পূর্ণ বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের মেয়ের বিয়ে দেবে না। এদিকে ওই মেয়েটি যাতে পুনরায় পড়াশোনা করতে পারে তার সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন।