মহানগর ওয়েবডেস্ক: উৎসবের মরসুমে পেঁয়াজের ঝাঁজে চোখে জল আসছে সাধারণ মানুষের। সারাদেশের সঙ্গে এরাজ্যে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। অতিবৃষ্টির কারণে প্রধান দুই পেঁয়াজ উৎপাদনকারী রাজ্য মহারাষ্ট্র কর্নাটক থেকে সরবরাহ কমে যাওয়ায় এই দাম বৃদ্ধির প্রধান কারণ। কিন্তু নভেম্বরের আগে যোগান স্বাভাবিক হওয়ার কোন আশ্বাস মিলছে না। তাই আপাতত বাজারে পেঁয়াজের দাম কমার আশা প্রায় নেই বললেই চলে। এমত অবস্থায় সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। যোগান ঘাটতির সুযোগে কালোবাজারি রুখতে পেঁয়াজ মজুতের সীমা বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রক।
পাশাপাশি খোলাবাজারে বাজারে জোগান বাড়াতে সরকারি ভান্ডারে মজুত পেঁয়াজও বাজারে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকার ও তাদের নিজস্ব পরিকাঠামোর মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত কম দামে পেঁয়াজ বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে চাহিদা নিরিখে তা পর্যাপ্ত নয় একথা স্বীকার করছেন সরকারি কর্তারা। তাই নতুন ফসল ঘরে ওঠার আগে পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক অবস্থায় আসবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাজধানীতে পেঁয়াজের দাম খুচরো বাজারে কেজিপ্রতি ৭০ টাকা ছুঁয়েছে। কলকাতায় খুচরা বাজারে পেঁয়াজ মিলছে প্রতি কেজি ৬০টাকা দরে। অন্য রাজ্যেও দাম এর আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। এমত অবস্থায় পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রক সূত্রে খবর তাদের হতে ‘বাফার স্টক’ হিসাবে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ মজুত রয়েছে। এরমধ্যে ৩৫ হাজার টন পেঁয়াজ নাফেডের মত এজেন্সির মাধ্যমে খোলাবাজারে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই ১৫ হাজার টন পেঁয়াজ বাজারে এসে গিয়েছে। রাজ্যগুলিকে এই পেঁয়াজ খোলা বাজারে ২২–২৪ টাকা কিলো দরে বিক্রি করতে বলেছে কৃষি মন্ত্রক।
এ রাজ্যের সরকার অবশ্যই নিজস্ব পরিকাঠামো ব্যবহার করেই সাধারণ মানুষের হেঁসেলে সুলভ পেঁয়াজ পৌঁছে দিতে উদ্যোগী হয়েছে। রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত জানিয়েছেন জেলায় জেলায় সুফল বাংলা স্টল এর মাধ্যমে সুলভে পেঁয়াজ বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে কেন্দ্র নির্ধারিত দামের তুলনায় অনেকটাই বেশি। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতি কেজি ৫১ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করা শুরু করেছি। সুফল বাংলার ১০৬ টি স্টল থেকে এই দামে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে।’ তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা যথেষ্ট নয় একথা তাঁর দফতরের আধিকারিকরা মেনে নিচ্ছেন। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে রাজ্যের বাজারদর নিয়ন্ত্রণে গঠিত ট্রাক ফোর্সের ভূমিকা নিয়েও। সাম্প্রতিককালে মুরগির মাংস, পেঁয়াজ সহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়লেও তা নিয়ন্ত্রণে টাস্কফোর্সের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। দীর্ঘদিন কোন বৈঠকেও বসেনি মুখ্যমন্ত্রী নিয়ন্ত্রণাধীন ওই টাস্কফোর্স।
পেঁয়াজ উৎপাদনের রাজ্যকে স্বনির্ভর করে তুলতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যেই উৎপাদন বাড়িয়ে অন্য রাজ্যের ওপর নির্ভরতা অনেকটাই কমে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি সেই দাবীর বাস্তবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।