নিজস্ব প্রতিবেদক, জলপাইগুড়ি ও বাঁকুড়া: করোনা আতঙ্ক থাবা বসিয়েছে এই রাজ্যেও। আর তার মাঝেই দেশে পাওয়া গিয়েছে সোয়াইন ফ্লু’তে আক্রান্তের খবর। এই সব নিয়ে রাজ্যবাসীর ভয় ছিলই। এর সঙ্গে আন্ত্রিক ও জন্ডিসে আক্রান্তের খবরে আশঙ্কা ছড়িয়েছে আরও। জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে আন্ত্রিকে আক্রান্ত ১৫০ জনেরও বেশি। বাঁকুড়ার রানীবাঁধে জন্ডিসে আক্রান্ত ৯০ জনেরও বেশি। আতঙ্কিত উত্তর থেকে দক্ষিণ। সকলের মনেই আতঙ্ক। রোগ মোকাবিলায় তৎপর স্বাস্থ্য দফতর।
জানা গিয়েছে, রানীবাঁধ ব্লকের নতুনডিহি-পূর্ণাপানি গ্রামে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে জণ্ডিসে আক্রান্তের সংখ্যা। এর মধ্যে যেমন রয়েছে শিশুরা, তেমনি রয়েছেন প্রসূতি মায়েরাও। দিনের পর দিন রানীবাঁধ ব্লক হাসপাতালে জন্ডিস আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কয়েকজন ভর্তি রয়েছেন খাতড়া মহকুমা হাসপাতালে। অনেকে ভর্তি পার্শ্ববর্তী ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। গ্রামবাসীর দাবি, এরই মধ্যে বছর কুড়ির হেনা খাতুন নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে জণ্ডিসে। এই খবরের পরেই আরও বেশি করে আতঙ্ক গ্রাস করেছে গ্রামকে।
খবর পেয়ে পরিস্থিতি দেখতে গ্রামে আসেন রানীবাঁধের বিধায়ক জ্যোৎস্না মাণ্ডি। গ্রামের আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে দেন নিজের হাতে। তাঁর নির্দেশে স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে একটি দল ওই জণ্ডিস আক্রান্ত গ্রামে যায়। মেডিক্যাল টিম জলের নমুনা সংগ্রহ করেছে। অসুস্থদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অযথা আতঙ্কিত না হওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে। মাছ, মাংস খেতে নিষেধ করা হয়েছে। কুয়ো, নলকূপ, টাইমকলের জল ফুটিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গ্রামবাসীর দাবি, এই গ্রামের প্রায় ৯০ জন জন্ডিসে আক্রান্ত। শিশু, বৃদ্ধ, পুরুষ, মহিলা, প্রসূতি, সন্তানসম্ভবা বাদ নেই কেউই।
রানীবাঁধের এই গ্রামে ১৬০ টি সংখ্যালঘু পরিবার বাস করে। তাদের বেশীরভাগই শ্রমজীবী। স্থানীয় বাসিন্দা রফিক খান বলেন, ‘আমার বাড়ির সাত সদস্যের পাঁচ জন জণ্ডিসে আক্রান্ত। রোজগেরে সব সদস্যরাই অসুস্থ হয়ে পড়ায় অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়তে হচ্ছে।’ গ্রামবাসী শেখ আজাদ আলি বলেন, তাঁরা কুয়ো-নলকূপ ও টাইমকলের জল পান করেন। স্বাস্থ্য দফতরের পরামর্শে জল ফুটিয়ে খাওয়া হলেও জণ্ডিসের প্রকোপ কমছে না। অবিলম্বে মেডিক্যাল ক্যাম্প করে চিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা।
স্থানীয় বিধায়ক জ্যোৎস্না মাণ্ডি ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘গ্রামের প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ জণ্ডিসে আক্রান্ত। খবর পাওয়ার পরই পর পর দু’দিন গ্রামে এসেছি। আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি প্রত্যেকের চিকিৎসার কথা বলা হয়েছে।’ বাঁকুড়া থেকে একটি মেডিক্যাল টিম গ্রামে আসছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে, আন্ত্রিকের প্রকোপে জেরবার জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি শহর। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম অবস্থা হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। বিগত কয়েকদিন ধরেই ধূপগুড়ি শহরজুড়ে দেখা দিয়েছে আন্ত্রিক রোগ। এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৫০-রও বেশি মানুষ আন্ত্রিকের প্রকোপে ধূপগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। দিন দিন রোগীর পরিমান বৃদ্ধি পাওয়ায় রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা। হাসপাতাল চত্বরে প্রায় দুই শতাধিক রোগীকে ডাক্তার দেখানোর জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এদের মধ্যে অধিকাংশের মধ্যেই আন্ত্রিকের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। দিনের থেকে রাতের দিকেই অধিক সংখ্যক রোগী চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসছেন বলে জানা গিয়েছে হাসপাতাল সূত্রে। জানা গিয়েছে, রোগীরা মূলত ধূপগুড়ি পুরসভা এলাকার বাসিন্দা। তবে ঠিক কী কারণে শহরজুড়ে এক সঙ্গে এত লোক অসুস্থ, তা এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও অনেকেই এর জন্য পিএইচই-র পানীয় জলকেই দায়ী করছে।
হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা এক রোগীর আত্মীয় অনিন্দ্য বড়ুয়া বলেন, ‘শহরের অধিকাংশ বাড়িতে এই ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। ভয় হচ্ছে’। স্থানীয় বাসিন্দা জয় বসাক বলেন, এই মুহূর্তে পুরসভার উচিত এই রোগ নিয়ে সচেতনতার প্রচার করা।
স্থানীয় ওষুধ বিক্রেতাদের থেকে জানা গিয়েছে, গত তিন দিন ধরে ওআরএস- এর চাহিদা বিপুল পরিমাণে বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে পেটের সমস্যা এবং বমির ওষুধের চাহিদা।