রাজেশ সাহা, কলকাতা: আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া এক যুবতীকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে ফের একবার নজির গড়ল কলকাতা পুলিশ। লালবাজার এবং রবীন্দ্র সরোবর থানার পুলিশের যৌথ তৎপরতায় বেঁচে গেল আরও একটি তরতাজা প্রাণ। ঘটনাস্থল এবার রবীন্দ্র সরোবর লেক। ১০০ ডায়ালে ফোন পেয়ে রবীন্দ্র সরোবরে আত্মহত্যা করতে চলা ওই যুবতীকে উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় তাঁকে। পুলিশের সক্রিয়তায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে ওই যুবতীর পরিবার।
ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার দুপুরে। মামার সঙ্গে অশান্তির পর রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় বছর বাইশের এক যুবতী। দক্ষিণ কলকাতার বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা ওই কলেজ ছাত্রী, বাড়ি থেকে বেরোনোর পর তাকে দীর্ঘক্ষণ আর ফোনে পাওয়া যায়নি। যখন পাওয়া গেল, অভিমানী গলায় নিজের মামাকে সে জানায়, রবীন্দ্র সরোবর লেকে সে আত্মহত্যা করতে এসেছে। কেউ যেন তাকে আর বিরক্ত না করে। ভাগ্নির গলায় এই সুর শুনে দিশেহারা হয়ে যায় ওই পরিবার। এরপর হাতের কাছে কোন উপায় না পেয়ে দ্রুত ১০০ নম্বরে ফোন করেন তার মামা, পেশায় আইনজীবী। কন্ট্রোল রুমের আধিকারিকদের তিনি জানান, রবীন্দ্র সরোবর লেকে আত্মঘাতী হতে চলেছেন তার একমাত্র ভাগ্নি, পুলিশকে কাতর অনুরোধ করেন দ্রুত সক্রিয় হয়ে তাকে যেন উদ্ধার করা হয়।
এই খবর পাওয়া মাত্রই লালবাজার কন্ট্রোল রুমের তরফ থেকে বিষয়টি সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় রবীন্দ্রসরোবর থানার ওসি জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়ের। খবর পেয়েই দ্রুত নিজের বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্য রওনা দেন থানার ওসি নিজে। পাশাপাশি ওই যুবতীর মোবাইল নম্বর থেকে লোকেশন ট্র্যাক করতে শুরু করেন থানার অন্যান্য তদন্তকারী আধিকারিকরা। পুলিশ সূত্রে খবর, নম্বর ট্র্যাক করে দেখা যায় লেকের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করছে টাওয়ার লোকেশন। বারবার ওই নম্বরে ফোন করা হলেও কিছুতেই ফোন তুলছিলেন না যুবতী।দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা করার পর অবশেষে একবার ফোন ধরা হয়। থানার সাব-ইন্সপেক্টর সঞ্জীব চক্রবর্তী তাকে সহানুভূতির গলায় পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়ে সিদ্ধান্ত পূনর্বিবেচনার অনুরোধ করেন এবং আত্মহত্যার পথ থেকে সরে আসতে কাতর অনুরোধ করতে থাকেন। ফোনেই চলতে থাকে প্রাথমিক ভাবে বোঝানোর কাজ। পরিকল্পনা অনুযায়ী এই পদ্ধতিতে তাঁকে ব্যস্ত করে রাখেন থানার আধিকারিকরা। অন্যদিকে ততক্ষণে এডিশনাল ওসিকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছে যান ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়। রবীন্দ্র সরোবর লেকের গেটের কাছ থেকে ওই যুবতীকে উদ্ধার করা হয়। বেঁচে যায় শেষ হতে বসা একটি তরতাজা প্রাণ।
এরপর তাঁকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসে চলে দফায় দফায় বোঝানোর কাজ। খবর পুলিশ সূত্রে খবর, পারিবারিক সমস্যার জেরে দীর্ঘদিন ধরেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার মামার সঙ্গে অশান্তি চরমে ওঠায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন তিনি। তবে পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলার পর, দ্বিতীয় বার এমন ভুল করবেন না বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ওই যুবতী। এরপর তাঁর আত্মীয়দের হাতে ওই যুবতীকে তুলে দেয় রবীন্দ্র সরোবর থানার পুলিশ। ভাগ্নিকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনায় পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ওই যুবতীর মামা সহ পরিবারের সদস্যরা।
প্রসঙ্গত, এর আগেও বেশ কয়েকবার আত্মঘাতী হতে বসা বহু মানুষকে শেষ মুহুর্তে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনে নজির গড়েছে কলকাতা পুলিশ। সপ্তাহ দুয়েক আগেই মধ্য রাতে একই কায়দায় খবর পেয়ে, গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়তে যাওয়া এক যুবককে উদ্ধার করে গড়ফা থানার পুলিশ। এছাড়াও সাম্প্রতিক অতীতে লালবাজার সাইবার থানার সক্রিয়তায় রক্ষা পেয়েছে অসংখ্য প্রাণ।