Highlights
- তাপস পালেই স্মৃতিচারণা করলেন কুনাল ঘোষ
- তাপস পালকে নিয়ে ফেসবুকে দীর্ঘ একটি পোস্ট লেখেন কুনাল ঘোষ
- পোস্টটির ক্যাপশনে দেন, ‘আ অ্যাকটর কিলড বাই পলিটিক্স’।
মহানগর ওয়েবডেস্ক: প্রয়াত বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম অভিনেতা তাপস পাল। তার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা বাংলা চলচ্চিত্র জগত। অভিনয়ের পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের হাত ধরে রাজনৈতিক জগতে প্রবেশ করেন তিনি। প্রথমে বিধায়ক ও পরে সাংসদ হন তাপস পাল। তবে সেই রাজনীতির জগতেই তাকে ঠেলে দিল এক অন্ধকার জগতে। আজ সেই তাপস পালেই স্মৃতিচারণা করলেন কুনাল ঘোষ। ফেসবুকে দীর্ঘ একটি পোস্ট করেন কুনাল ঘোষ। লেখেন, তাপসদা, চিরশান্তিতে থেকো। খুব মিস্ করব। পোস্টটির ক্যাপশনে দেন, ‘আ অ্যাকটর কিলড বাই পলিটিক্স’।
কুনাল ঘোষ লেখেন, “উত্তমকুমার পরবর্তী বাংলা ছবির শ্রেষ্ঠ রোমান্টিক নায়ক ছিলে তুমি, এ নিয়ে কোনো কথা হবে না। “দাদার কীর্তি” আর কেউ পারত না, যা দিয়ে তোমার ইনিংস শুরু। তারপর তুমি হয়ে উঠেছ অন্যতম সেরা অভিনেতা। অল রাউন্ডার। লবিবাজির টলিউড তোমাকে পুরো ব্যবহার করতে পারে নি। তুমিই ছিলে মাধুরী দীক্ষিতের প্রথম ছবি “অবোধ” এর নায়ক। ইচ্ছে করলে বম্বেতে সময় দিতে পারতে, দাওনি, থেকেছো কলকাতাতেই।”
কুনাল আরও লেখেন, “যখন কোনো তারকা তৃণমূলে নাম লেখাচ্ছে না, সেই যুগ থেকে তুমি মমতাদির সঙ্গে। তখন যারা তোমায় কটাক্ষ করত, কোণঠাসা করত, তারাই পরে দেখেছি মমতাদি বসার আগে নিজের রুমাল দিয়ে চেয়ার সাফ করছে। তোমার আনুগত্য প্রশ্নাতীত। 20 সেপ্টেম্বর 2013। সোমেনদার রক্তদান শিবির থেকে তুমি আমি শতাব্দী কিছু ক্ষোভের কথা জানাই। বিতর্ক বাড়ে। সেপ্রসঙ্গ থাক। কিন্তু বলার এটাই যে সেই সূত্রে আমরা পরস্পরের যন্ত্রণাগুলো জানতাম।
“তুমি বিধায়ক হিসেবে বিধানসভায় গেছো নিয়মিত। লোকসভাতে উপস্থিত থেকেছো দারুণভাবে। হাসিমুখে তোমার সংসদে ঘোরা, ভালোবাসতো সবাই।
তোমার সঙ্গে আড্ডা অসাধারণ। অপূর্ব তোমার মানসিকতা। মা যতদিন বেঁচেছিলেন, ততদিন ফোনে প্রথমেই “মাসিমা কেমন আছেন” বলাটা তোমার বাদ যায় নি। অফিসে, আমার বাড়িতে, দিল্লিতে কত নিঃস্বার্থ নিঃশর্ত গল্প, স্মৃতিগুলো চোখে ভাসছে। কত ঘটনা, সেসব আজ এই মুহূর্তে লেখার নয়, তবে লিখব হয়ত পরে কখনও।”
এরপরেই কুনাল ঘোষ লেখেন, তুমি একাধিক বিতর্কে ঘটনাচক্রে জড়িয়েছিলে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি তাপস পাল একটা নির্ভেজাল ভালো মানুষ। বাইরে থেকে বোঝা যাবে না। মন থেকে ভালো তুমি। রোজ ভ্যালির ঘটনাটি তুমি জেনে কতটা করেছ আর কতটা পাকেচক্রে জড়িয়েছো, আমার সন্দেহ আছে। আর জনসভায় ঐ বিতর্কিত সংলাপটি তুমি বলেছো স্রেফ তোমার ফিল্মি ব্যাকগ্রাউন্ডের জন্য, হাততালি কুড়োতে, অতটা ভাব নি, এই আফশোসে নিজে জ্বলেপুড়ে মরেছো শেষদিন পর্যন্ত।
“তুমি লবি করে তেল দিয়ে সময় নষ্ট করো নি। নিজের মত ছিলে। মনের অশান্তি ঢাকতে একটু ভালোবাসা খুঁজে বেড়িয়েছো। শেষদিকে একাধিক অভিমানে ছিলে জর্জরিত।
তুমি অসুস্থ ছিলে বেশ কিছুদিন। তবু লড়াই চলছিল। এইভাবে চলে যাবে, ভাবতে পারছি না। এই তো কিছুকাল আগেও এক মঞ্চে দেখা, কত কথা। মাইক হাতে প্রকাশ্যে তুমি এমনভাবে আমার সম্পর্কে বললে, একেবারে যেন নিজের বড় দাদা।”
“তাপসদা, তুমি তোমার মত ছিলে। সাদা মন, সাদা মুখ। শেষদিকের বিতর্কগুলো তোমাকে কষ্ট দিয়েছে। কিন্তু তুমি নিশ্চিন্ত থাকো, তাপস পাল থাকবে তাপস পালই। একসময়ের রাজা, পরবর্তীকালে জীবনপথের ভুলভুলাইয়ায় সন্ন্যাসী রাজা!নন্দিনীদি, সোহিনীকে গভীর সমবেদনা জানাই। শতাব্দীও ওর বন্ধুকে খুব মিস্ করবে, জানি।
তাপসদা, অসময়ে গেলে। আফশোস নিয়ে গেলে। অভিমান নিয়ে গেলে। যেখানেই থাকো, খুব ভালো থেকো।”
“উজ্জ্বলতম তারকা, অহংহীন, ছেলেমানুষি মনখোলা আড্ডার দাদা ছিলে তুমি। তোমাকে ভুলব না। আর বাংলা ছবিও মনে রাখবে, তাপস পালকে।” এখানেই নিজের পোস্টটি শেষ করেন কুনাল ঘোষ।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে ৩১ ডিসেম্বর রোজভ্যালিকাণ্ডে গ্রেফতার হন তাপস পাল। ১৩ মাস জেলে থাকার পর জামিনে মুক্তি পান তিনি। জেলে থাকার সময় থেকেই তার শারীরিক অসুস্থতা বাড়তে থাকে।