নিজস্ব প্রতিবেদক, কোচবিহার: সকালে জেলায় ভাইপো দু-দুটি সভা করে গেরুয়া শিবিরকে লক্ষ্য রেখে আক্রমণের সুরটা বেঁধে দিয়েছিল। বিকালে গিয়ে পিসি সেই সুরকে আরও এগিয়ে নিয়ে গেলেন। প্রত্যাশিতভাবেই এদিন পিসি-ভাইপো দুজনেই শুধু বিজেপিকে নয়, আক্রমণ শানিয়েছে মোদীকে লক্ষ্য করেও। সব থেকে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় এদিন মুখ্যমন্ত্রী মোদীকে আক্রমণ করেছেন ‘এক্স প্রাইম মিনিস্টার’ সম্বোধন করে।
বুধবার শিলিগুড়িতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভার পর কোচবিহার দিনহাটা সংহতি মাঠে সভা করলেন মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সভার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমন করে ‘এক্স প্রাইম মিনিস্টার’ বলে সম্বোধন করে আক্রমণ করেন। শিলিগুড়িতে প্রধানমন্ত্রী সভার পাল্টা আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন গরিবদের জন্য আমারা সরকারি কোন কাজ করেনি। তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলছি যদি ক্ষমতা থাকে তো পাশাপাশি বসে বিতর্কে আসুন। আপনি প্রশ্ন করবেন, আমি উত্তর দেব। কিন্তু মিথ্যা কথা বলবেন না। চৌকিদার শুধু কথাই বলে না ভুরি ভুরি মিথ্যা কথা বলেন। ৫৬ ইঞ্চি ছাতি নিয়ে পাঁচশ ছাপ্পান্ন ইঞ্চি মিথ্যা কথা বলেন। আমার কথা থেকেই টুকলি করে জগাই মাধাই কথাটি নিয়েছেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমি দিয়েছিলাম। কংগ্রেস সিপিএম বিজেপি এক। সিপিএমের লোক সকালে সিপিএম করে, দুপুরে কংগ্রেস আর রাতে বিজেপি। যে এই জেলায় বাচালগিরি করেছে তাকে আমরা বের করে দিয়েছি। ওর নামে বিভিন্ন মামলা রয়েছে। এ ধরনের একজন দাগী আসামীকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। ফলটা ওদেরই বেশি ভুগতে হবে। এক্স প্রাইমমিনিস্টার আজ ব্রিগেডে সভা করেছেন। সেই সভায় ৮০ শতাংশই ফাঁকা ছিল। সামিয়ানা দিয়ে সেটাকে আড়াল করেছে। সভার জন্য লোক আনতে ট্রেন ভাড়া করেছিল চারখানা। একটাও ভরেনি। বার বার বাংলায় এসে বলে আয়ুষ্মান প্রকল্পের কথা। আমরা নাকি ওই প্রকল্প আটকে দিয়েছি। আপনারা শুনে রাখুন ওই প্রকল্পে ৪০ শতাংশ টাকা আমাদের দিতে হবে তাই আমরা সেটা মেনে নিইনি। কারন আমাদের নিজেদের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প করে দিয়েছি।’
এদিন দিনহাটায় নির্বাচনী জনসভা শেষ করে মুখ্যমন্ত্রী কোচবিহার শহরে এসে মদনমোহন ঠাকুরবাড়িতে পুজো দেন। সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিট নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী ঠাকুরবাড়িতে প্রবেশ করেন। মদন মোহন ঠাকুরের কাছে সমগ্র রাজ্যবাসীর কল্যাণে তিনি পুজোও দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমার নামে পুজো নয় মা মাটি মানুষ অর্থাৎ রাজ্যের সমস্ত মানুষের কল্যাণে আমি মদনমোহন ঠাকুরের কাছে পূজো দিয়েছি। মদনমোহন ঠাকুরের কাছে সকলের কল্যাণ চেয়ে পূজো দিয়েছি।’ হঠাৎ করে মুখ্যমন্ত্রীর মদনমোহন বাড়িতে আসায় অবাক হয়ে যান মন্দিরের পুরোহিত থেকে শুরু করে দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের কর্মচারীরা। কড়া নিরাপত্তায় ঘিরে ফেলা হয় গোটা মন্দির চত্বর। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমোকে দেখতে মদনমোহন মন্দিরের বাইরে মানুষের ভিড় জমে যায়। অনেকে আবার মুখ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে ছবিও তোলেন। মুখ্যমন্ত্রী কথা বলেন মন্দিরের পুরোহিত সহ অন্যান্য কর্মচারীদের সঙ্গে। এরপর মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় সরাসরি বিশ্বসিংহ রোডের একটি বেসরকারি হোটেলে পৌঁছালে সেখানে মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে হোটেলের বাইরে বিশাল ভিড় জমে যায়। উল্লেখ্য এর আগেও কোচবিহারে মদনমোহন বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রী এসেছিলেন। দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের কর্মচারীদের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে। কোচবিহার মদনমোহন বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর পুজো দেওয়া যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।