ডেস্ক: তিনি রাজ্য বিধানসভায় নিজে দাঁড়িয়ে থেকে প্রস্তাব পাশ করিয়েছিলেন পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্য গঠনের স্বপক্ষে। শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, দার্জিলিংয়ে গণ্ডগোল পাকানোর জন্য প্রতিবেশী এক রাষ্ট্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে টাকা-অস্ত্র দুটোরই অগাধ যোগান দিয়ে গিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশ ও সিআইডির তাড়া খেয়ে পালিয়ে বেড়ানো বিমল গুরুংকে রাজনৈতিক আশ্রয় ও মদত দেওয়ার অভিযোগও উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। সেই পবন চামলিং, সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী এবার মুখোমুখি বৈঠকে বসতে চলেছেন এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ১৬ মার্চ, মুখ্যমন্ত্রীর চলতি উত্তরবঙ্গ সফরের সময়েই, শিলিগুড়িতে উত্তরকন্যায় মুখোমুখি বৈঠকে বসতে চলেছেন মমতা-চামলিং।
কিন্তু হঠাৎ করে এত বড় পরিবর্তন ঘটল কীভাবে? যে চামলিং এতদিন খুল্লাম খুল্লা গুরুংকে সমর্থন দিয়ে এসেছেন তিনি আজ রাতারাতি শিবির বদলে কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন? সূত্রের খবর, কার্যত চাপের মুখেই এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন চামলিং। চাপটা শুধু রাজনৈতিক স্তরে ছিল না, ছিল আর্থসামাজিক ভাবেও। প্রথমত, দেশে এমন বেশ কিছু রাজ্য রয়েছে যেখানে পৃথক রাজ্য গঠন নিয়ে আন্দোলন মাঝে মধ্যেই মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। কিন্তু সেসব ক্ষেত্রে কোনদিন প্রতিবেশী কোন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে এতটা সক্রিয় হতে দেখা যায় না যেটা চামলিংয়ের ক্ষেত্রে দেখা গেছে। সেই ঘটনা দেশের রাজনীতিতে চামলিংয়ের ভাবমূর্তি যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সেই ক্ষতি পূরণের রাস্তা খুঁজছিলেন চামলিং। দ্বিতীয়ত, চামলিংয়ের রাজনৈতিক লক্ষ্য ছিল দার্জিলিংয়ে তার প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়াতে। সেই কাজে মোর্চা আর গুরুংবাহিনী তার লক্ষ্যপূরণের হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল। কিন্তু গুরুং বাহিনীর হাতে রাজ্য পুলিশের এসআই অমিতাভ মালিকের মারা যাওয়ার ঘটনা রাতারাতি সব হিসাব উল্টে দেয়। গুরুং গোটা রাজ্যবাসীর কাছে খলনায়ক হয়ে ওঠেন। তার বিরুদ্ধে বিনয় তামাং আর অনিল থাপার বিদ্রোহ পাহাড়ের সব রাজনৈতিক হিসাব উল্টে দেয়। জনপ্রিয়তা আর ক্ষমতা দুটোই দ্রুত হারিয়ে ফেলেন গুরুং। এরপর সময় যত গড়িয়েছে ততই পাহাড়ের রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়েছে গুরুংবাহিনী। ভবিষ্যতেও পাহাড়ে গুরুংয়ের ফিরে যাওয়া বা পুনরায় ক্ষমতা ফিরে পাওয়া কার্যত অসম্ভব। তাই চামলিংও আর গুরুংকে প্রয়োজনীয় মনে করছিলেন না। কার্যত গুরুংকে এখন ঝেড়েই ফেলতে চান সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী।
তৃতীয়ত ভৌগলিক ভাবে পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমের অবস্থান এমনই যে সিকিমের সিংহভাগ মানুষ পদে পদে এ রাজ্যের উপর নির্ভরশীল। তা সে শিক্ষা হোক কি স্বাস্থ্য, পর্যটন হোক কি পরিবহন, খাদ্য হোক কি পানীয় সব ক্ষেত্রেই পশ্চিমবঙ্গের উপর সিকিমের নির্ভরশীলতা প্রশ্নাতীত। কিন্তু গুরুংকে ঘিরে দুই রাজ্যের সম্পর্কে অবনতি সেই নির্ভরশীলতায় সরাসরি আঘাত হেনেছিল। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন সিকিমের মানুষেরা। সেটা চামলিংয়ের ওপর চাপ বাড়িয়েছিল। তিনি দেরিতে হলেও বুঝেছিলেন গোর্খাল্যান্ড আর গুরুং নিয়ে তার রাজনৈতিক পদক্ষেপ সিকিমের পক্ষে ক্ষতিকর হচ্চিল। চতুর্থ, রাজ্য সরকার সাম্প্রতিকালে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ রাজ্যে দৈনিক ততগুলি গাড়িই সিকিম থেকে ঢুকতে দেওয়া হবে যতগুলি এরাজ্যের গাড়ি দৈনিক সিকিমে প্রবেশের ছাড়পত্র পাবে। যদি এই সিধান্ত কার্যকর হোত তাহলে সিকিমের পরিবহন থেকে পর্যটন সবকিছুতেই চূড়ান্ত বিপর্যয় নেমে আসত। এরপরেই চামলিং দ্রুত সমস্যার সমাধানের রাস্তা খুঁজছিলেন। সূত্র মারফত জানা গেছে এ রাজ্যের এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী বরফ গলাতে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছেন। তার নিট রেজাল্ট ১৬ তারিখের বৈঠক।