
মহানগর ডেস্ক: গতকাল সিরাম ইন্সটিটিউটে ভয়াবহ আগুনে মৃত পাঁচ জনের পরিবারকে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা নরেন্দ্র মোদী সরকারের।
গতকাল, করোনা ভ্যাক্সিন নির্মাতা সংস্থা সিরাম ইন্সটিটিউটের কারখানায় ভয়াবহ আগুনে মৃত্যু হয়েছে পাঁচ জন ব্যক্তির। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে এই তথ্য। মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে পুণের জেলা শাসক।
পুণের মেয়র মূরলিধর মোহল জানিয়েছেন, ওই পাঁচজনের মৃতদেহ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর উদ্ধার করা হয়। ‘‘সম্ভবত নির্মীয়মাণ বাড়িটির ছ’তলায় আটকে পড়েছিলেন তাঁরা।আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় আর বেরতে পারেননি।’’
নির্মীয়মাণ বাড়িটিতে ঢালাইয়ের কাজ চলছিল। পাঁচ মৃত ব্যক্তি ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করছিলেন বলে প্রাথমিক অনুমান। পুণের মেয়র মোহল জানিয়েছেন, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর জওয়ানেরাই মৃতদেহ উদ্ধার করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে মহারাষ্ট্রের পুণের মঞ্জরী এলাকায় করোনার টিকা কোভিশিল্ড প্রস্তুতকারী সংস্থা সেরাম ইনস্টিটউটে ভয়াবহ আগুন লাগে। প্রাথমিক ভাবে আগুনে কারও প্রাণহানি হয়নি বলেই জানিয়েছিলেন সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান আদর পূনাওয়ালা। কিন্তু, পরে পুণের জেলাশাসক রাজেশ দেশমুখ জানান, সেরামে অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৫ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
ইনস্টিটিউটের ১ নম্বর টার্মিনালের গেটের লাগোয়া একটি নির্মীয়মাণ ভবনে বৃহস্পতিবার দুপুরে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। টিকা তৈরির কাজ সেখানে শুরু না হলেও তার প্রস্তুতি চলছিল।
বৃহস্পতিবার সেই বাড়িটিরই চতুর্থ ও পঞ্চম তলে আগুন লেগে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কালো ধোঁওয়ায় ঢেকে যায় এলাকা। । খবর পেয়েই অগ্নিনির্বাপণ বাহিনী পৌঁছে যায় ঘটনাস্থলে। তবে এই আগুন লাগার ঘটনায় সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল যা নিয়ে, সেই টিকা তৈরি ও মজুত করার জায়গাটি নিরাপদেই আছে বলে আশ্বস্ত করেছেন পুণের পুলিশ কমিশনার। বৃহস্পতিবাবার বিকেল পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডে কেউ আহত হননি বলেও জানান সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান আদর পূনাওয়ালা।
শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, দমকলবাহিনী ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করেছে ৯ জনকে। খালি করে দেওয়া হয়েছে সেরামের ওই ভবনটি। ভিতরে কেউ আটকে আছেন তা দেখে নিচ্ছে দমকল বাহিনী। পুলিশ কমিশনার আশ্বস্ত করেন, এক ঘণ্টার মধ্যেই নেভানো হয় আগুন। ঘটনাস্থলে দমকলের অন্তত ১৫টি ইঞ্জিন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বৃহস্বপতিবারের এই ঘটনায় মঞ্জরীতে পৌঁছে যান মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেও।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যলয় ও ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকার তত্ত্বাবধানে করোনার টিকা কোভিশিল্ড তৈরি করছে সেরাম। দেশজুড়ে টিকাকরণ শুরু হওয়ায় টিকা তৈরি ও তা বিপুল পরিমাণে সরবরাহের প্রক্রিয়াও জারি রয়েছে সেরামে। এরই মধ্যে কোভিশিল্ড প্রস্তুতকারী সেরামের কারখানায় আগুন লাগায় উদ্বেগ বেড়েছিল। পরে একটি সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানিয়ে দেওয়া হয়, সেরাম ইনস্টিটিউটের আগুন টিকা তৈরি ও তা মজুত করার জায়গাটির কোনও ক্ষতি করতে পারেনি।
এ ব্যাপারে দেশের মানুষকে আশ্বস্ত করেছেন, সিরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান আদর পূনাওয়ালা। একটি টুইট করে তিনি লেখেন, ‘এখনও পর্যন্ত ভাল খবর বলতে এটুকুই যে, যে কারও প্রাণহানি হয়নি। কেউ মারাত্মকভাবে জখম হননি। শুধু একটা বাড়ির দু’টো তলা প্রায় পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে। যাঁরা আমাদের জন্য প্রার্থনা করেছেন, উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তাঁদের ধন্যবাদ।’
বৃহস্পতিবার দুপুর তিনটে নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। সিরাম ইনস্টিটিউটের এক নম্বর টার্মিনাল লাগোয়া ‘এসইজেড৩’ ভবনে আগুন লাগে। যদিও কীভাবে আগুন লেগেছে, তা জানানো হয়নি সেরাম ইনস্টিটিউটের তরফে। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা জারি রয়েছে এখনও।
প্রথমে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধিরা এসে পৌঁছন সিরামের মঞ্জরীর কারখানার সামনে। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে তাঁদের সঙ্গে প্রথম থেকেই যোগাযোগ রাখছিলেন। পরে তিনি নিজেই গিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন ।