নিজস্ব প্রতিনিধি: বিজেপিকে রুখতে তৃণমূল কংগ্রেসের ‘বহিরাগত’ স্লোগানের বিরুদ্ধে এবার মাঠে নামলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর সরকারের হাত ধরে রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়নের কর্মযজ্ঞকে তুলে ধরে তাঁর দাবি, বাংলার মানুষ চায় উন্নয়ন। তাই রাজ্যে শাসনক্ষমতার পরিবর্তনের পট প্রস্তুত।
গত সপ্তাহেই ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’ স্লোগান দিযে নতুন প্রচার শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দিন কয়েক যেতে না যেতেই সেই প্রচার ফিরিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন ডানকুনির সভা থেকে সরাসরি তৃণমূলের নয়া স্লোগান নিয়ে কথা না বললেও, ঘুরিয়ে কটাক্ষ করলেন ‘বাংলার মেয়ে’ প্রচারকে। ঘরে ঘরে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পের কথা তুলে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, বাংলার যে সকল মা-বোন-মেয়েরা এই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন না, তাঁরা কি বাংলার মেয়ে নন?
এদিন ডানলপ ময়দানের জনসভার মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদি অভিযোগ করেন, বাংলার মানুষ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা পায়নি তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের বাধা ও সদিচ্ছার অভাবে। উদাহরণ হিসাবে তিনি তুলে ধরেন, ঘরে ঘরে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্পের কথা। বলেন, গ্রামে গ্রামে মা-বোনদের যাতে কষ্ট করে পানীয় জল বয়ে না আনতে হয়, তার জন্যই কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্প এনেছিল। এই প্রকল্প খাতে বাংলার সরকারকে ১৭০০ কোটি টাকার বেশি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার মাত্র ৬০৯ কোটি টাকা সরকার খরচ করেছে। বাকি ১১০০ কোটি টাকা হাতে নিয়ে বসে আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বিষয় থেকেই বোঝা যায়, পশ্চিমবঙ্গের গরিব মানুষ, এই রাজ্যের মা-বোন-মেয়েদের জন্য তৃণমূল সরকারের কোনও ভাবনা নেই। তিনি আরও বলেন, যে গতিতে তৃণমূল সরকার কাজ করে, তাতে কবে এই প্রকল্পের কাজ কবে শেষ হবে, তা কেউ জানে না। এরপরই, সভামঞ্চ থেকে নরেন্দ্র মোদি প্রশ্ন তোলেন, যে মহিলারা এই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন না, তাঁরা কি বাংলার মেয়ে নন?
‘বাংলার গর্ব মমতা’ প্রচারের পর নির্বাচনের একেবারে মুখে তৃণমূল কংগ্রেস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন্দ্রে রেখে নতুন প্রচার হিসাবে এনেছে ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’ স্লোগান। গত কয়েক মাসে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতাদের ‘বহিরাগত’ বলে চিহ্নিত করে, তাদের বিরুদ্ধে বাংলার শিল্প-সংস্কৃতি অজ্ঞতার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলার ‘নিজের মেয়ে’ হিসাবে তুলে ধরে বাংলা-বহিরাগত মেরুকরণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলরে অভিযোগ শোনা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে।
এদিকে, রাজ্যে পরিবর্তনের পটভূমিকা প্রস্তুত বলে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, বাংলার পরিকাঠামো উন্নয়নে ইতিমধ্যেই প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। আর সেই কারণে ফ্রেট করিডরের সম্পূর্ণ সুবিধে পাচ্ছে বাংলা। আর তার ফলে রাজ্যের কৃষিজীবী ও মৎসজীবীরা তাদের তৈরি ফসল ও মাছ বাংলা থেকে অনেক সহজেই মুম্বই-সহ দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় পাঠিয়ে দিতে পারছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, খুব তাড়াতাড়ি শালিমার-মহারাষ্ট্র কিসান রেল চালু হচ্ছে। কিসান রেলের ফলে সুবিধে পাবেন রাজ্যের ছোট কৃষকরা।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাও উন্নয়ন চায়। আর সেই কারণে রাজ্যের উন্নয়নে গতি দিতেই নোয়াপাড়া থেকে দক্ষিণেশ্বর মেট্রোর উদ্বোধন তাঁদের কাছে অন্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলির মানুষ উপকৃত হবেন বলেও দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজ্যের উন্নয়ন থমকে যাওয়ার জন্য রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে নিশানা করেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রের স্বাস্থ্য ও জল প্রকল্পের সুবিধে রাজ্যের মানুষ পাচ্ছেন না। রাজ্যের উন্নয়ন প্রায় থমকে পয়েছে। অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে রাজ্য। কেন্দ্রীয় সরকার চালু করলেও এখনও পর্যন্ত রাজ্যের সব মানুষ এই সুবিধে পাননি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এদিন প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মঞ্চে ছিলেন রাজ্য বিজেপির প্রথম সারির নেতারা। দিলীপ ঘোষ, লকেট চক্রবর্তী, শুভেন্দু আধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতারা উপস্থিত ছিসেন। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে পরিবর্তন হবে বলেও দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।