ডেস্ক: আগামী ১০ বা ১১ তারিখ দামামা বেজে যাবে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হবে নির্বাচনের দিনক্ষণ। ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছেন গত বছরের মতোই এবছরেও নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন হবে। কিন্তু তাঁর আগেই ভোটের ময়দানে নেমে পড়েছেন জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধী। এদিন দু-জায়গাতে প্রাক নির্বাচনী প্রচারে গিয়েছিলেন রাহুল। পঞ্জাবের মোগা ও হিমাচলপ্রদেশের কাংড়াতে। দুটি জায়গাতেই তাঁর নিশানায় ছিল রাফাল ইস্যু। আর তাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অবদান। দীর্ঘদিন ধরে সংসদের বাইরে কিংবা ভিতরে, নির্বাচনী প্রচারে কিংবা জনসভাতে রাহুল গান্ধীর প্রধান অস্ত্র ছিল এই রাফাল যুদ্ধবিমান। প্রথমদিন থেকে তাঁর অভিযোগ ছিল, এই রাফাল চুক্তিতে কোনও কারচুপি হয়েছে আর যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এর আগে সেই কারণের সুপ্রীম কোর্টের দ্বারস্থ হন রাহুল।
যদিও প্রথমে রাফাল মামলা নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে রাজি হয়নি দেশের সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু গতকাল সুপ্রিমকোর্টে এই মামলা ওঠার পর চমকে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। প্রতিরক্ষামন্ত্রকের তরফ থেকে মহামাণ্য আদালতকে জানানো হয়, যে রাফাল-এর চুক্তি সংক্রান্ত সব নথি চুরি গিয়েছে। আর সেই বয়ানকেই কেন্দ্র করে লোকসভা ভোটের আগে দেশজুড়ে ঝড় তুলতে চলেছেন জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি। এদিন হিমাচল প্রদেশের কাংড়াতে সেই আভাস পাওয়া গিয়েছে তাঁর জনসভা থেকে। এদিনের জনসভা থেকে রাহুল জানিয়েছেন, ”আমরা বায়ুসেনার পক্ষে। কিন্তু যে কোম্পানির কাগজের প্লেন বানানোর অভিজ্ঞতা নেই তাকে কীভাবে রাফাল বানানোর বরাত দেওয়া হল। ১০ দিন আগে তৈরি হওয়া অনিল আম্বানির কোম্পানিকে ৩০,০০০ কোটি টাকা পাইয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। চৌকিদার চোর হ্যায়। হ্যালকে বরাত কেন দেওয়া হল না”? সেই বিষয়ে এদিনও প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন ছোঁড়েন রাহুল। পাশাপাশি রাহুল এদিন স্পষ্ট বলেন, ”নরেন্দ্র মোদীর দেশবাসীকে জানানো উচিত, উনি রাফালের চুক্তি অনিল আম্বানির স্বার্থে বদলে দিয়েছেন। এই বিষয়ে তাঁর কথাতেই সমস্ত কাজ হয়েছে।”
পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদী কৃষকদের জন্য তৈরি করা বিমাকেও খোঁচা দিয়ে রাহুল বলেছেন, ”কৃষকদের যে বিমা দেওয়ার কথা ছিল তাঁর সবটাই তো তিনি অনিল আম্বানিকে দিয়ে দিয়েছেন।” এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিরোধীদের বারবার নিশানা করছেন, যে তাঁরা নাকি পুলওয়ামার শহীদ জওয়ানদের নিয়ে, এয়ারস্ট্রাইক নিয়ে রাজনীতি করছেন। সেই বিষয়কে খারিজ করে রাহুল জানান, ”আমাদের শহীদদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা রয়েছে। কিন্তু পুলওয়ামা কিংবা এয়ারস্ট্রাইক নিয়ে সবচেয়ে বেশি রাজনীতি করছেন প্রধানমন্ত্রী খোদ নিজে।” এরই সঙ্গে রাহুল জানান, তাঁরা ক্ষমতায় এলে গরিবদের নূন্যতম মাসিক আয়, যুবকদের চাকরি ও গোটা দেশে একটাই জিএসটি লাগু করবেন। পাশাপাশি রাহুল নরেন্দ্র মোদীর করা নোটবন্দি নিয়েও কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, ”ব্যাঙ্কের লাইনে গরিব পরিবারের লোকজন, আমার আপনার মা-বোনেরা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন কিন্তু দেশের উদ্যোগপতিরা কোথায় ছিলেন সেই সময়। তাঁরা কেন ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়াননি। নোটবন্দির ফলে ক্ষতি হয়েছে ছোট ব্যবসাদারদের, লাভ হয়েছে অনিল আম্বানি, নীরব মোদীদের।” রাহুল আরও অভিযোগ করেন, ”প্রধানমন্ত্রী দুটি ভারত বানাতে চলেছেন। একটি গরিব, খেত-মজুরদের আর একটি উদ্যোগপতি ও অনিল আম্বানির মতো লোকজনদের জন্য। যেখানে তাঁরা প্রাইভেট জেট প্লেনে চড়ে বেড়াবেন।”
কার্যত রাহুলের এহেন চাঁচাছোলা আক্রমণকে যঠেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে রাজনৈতিক মহল। বিশেষ করে গতকালের সুপ্রিম কোর্টের ঘটনার জেরে রাহুলকে রাফাল ইস্যুতে বাড়তি অক্সিজেন এনে দিয়েছে খোদ বিজেপি সরকার, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।