
মহানগর ডেস্ক: রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রীপদ ছাড়লেও তা নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। অন্যদিকে ‘বেসুরো’ গাইতে থাকা বৈশালী ডালমিয়াকে বহিষ্কার করে সম্ভাব্য বিদ্রোহের বীজ ‘অঙ্কুরেই বিনাশ’ করছে তৃণমূল। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।
অন্যদিকে মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ইস্তফাপত্রে ‘পদ্ধতিগত ত্রুটি’ রয়েছে জানিয়ে রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে মন্ত্রিসভা থেকে ‘অপসারণ’ করা হল। শুক্রবার সন্ধ্যায় নবান্ন সূত্রে তেমনই জানানো হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে রাজীব জানিয়েছেন, তিনি আর কোনও বিতর্কে যেতে চান না। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁরা যেমন খুশি ব্যাখ্যা করতে পারেন। আমার কিছু বলার নেই।’’
তবে ওই ইস্তফাপত্রে কী ‘পদ্ধতিগত ত্রুটি’ আছে, তা নিয়ে আর জলঘোলা করতে চাইছে না রাজীবের ঘনিষ্ঠমহল। রাজীব নিজেও ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না। কিন্তু নবান্ন সূত্রে যা বলা হচ্ছে, তা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট— মন্ত্রিত্বে রাজীবের ইস্তফা ‘গ্রহণ’ না করে তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে ‘অপসারণ’ করা হল, সেটিই নথিতে লেখা থাকবে। অর্থাৎ, রাজীব যে ‘ত্যাগ’-এর পথে হাঁটার বার্তা দিতে চেয়েছেন, সেই সুযোগ তাঁকে দেওয়া হবে না। প্রশাসনিক মহল মনে করছে, এতদ্বারা রাজীবের বিরুদ্ধে সরাসরি ‘যুদ্ধ’ই ঘোষণা করে দিল নবান্ন। কারণ, এর আগে পতদ্যাগী দুই মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী এবং লক্ষ্ণীরতন শুক্লর ক্ষেত্রে এমন কিছু করা হয়নি। শুভেন্দুর ইস্তফাপত্র মুখ্যমন্ত্রী গ্রহণ করে নিয়েছিলেন। তার পর তিনি রাজ্যপালের কাছে সেই বার্তা পাঠান। লক্ষ্ণীরতনের ক্ষেত্রেও একই পন্থা অনুসরণ করা হয়েছিল। নবান্নের একটি সূত্রের মতে, রাজীব যে ভাবে রাজভবন থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘অসৌজন্য’-এর অভিযোগ করেছেন, তা ভাল ভাবে নেয়নি নবান্ন। শুভেন্দু বা লক্ষ্ণীরতনের ক্ষেত্রে তেমনকিছু ঘটেনি। তাঁরা ইস্তফা দেওয়ার সময় শুধু মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠিই পাঠিয়েছিলেন। প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য বা অভিযোগ করেননি। বস্তুত, ইস্তফা গ্রহণ করার পর মুখ্যমন্ত্রী লক্ষ্ণীরতন সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘‘ও ভাল ছেলে।’’
কিন্তু, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রীপদ ছাড়া প্রসঙ্গে গুরুত্ব দিতে চাননি তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এই বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘যাঁরা দল ছেড়ে যান, কী কারণে যান, তাঁরাই বলতে পারবেন। জনসমুদ্রের সমর্থনে তৃণমূল আজ এই জায়গায়। সমুদ্র থেকে দু’-ঘটি জল তুলে নিলে সমুদ্রের কিছু যায় আসে না। ঠিক যেমন দুটো পাতা ঝরে গেলে বটগাছের কিছু যায় আসে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো নিজেই একটা ইঞ্জিন। তিনিই সকলকে টেনে নিয়ে যান। কোন স্টেশনে কে নেমে গেলেন, তাতে কিছু যায় আসে না।’’
অপরদিকে বৈশালীকে দল থেকে বহিষ্কার করার পরেই সরগরম হয়ে উঠেছে রাজ্য রাজনীতি।
এই প্রসঙ্গে হাওড়া জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান অরূপ রায় বলেন, ‘‘দল সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলের বিরুদ্ধে কথা বলে যাঁরা দলের ক্ষতি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। কারও কোনও ব্যক্তিগত অভিযোগ থাকতেই পারে। সেটা দলের ভিতরেই বলা উচিত।’’
তাঁর বিরুদ্ধেও বিভিন্ন সময় বৈশালী যে অভিযোগ তুলেছেন, সে প্রসঙ্গে অরূপ বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে কে কী বললেন, তাতে কিছু যায় আসে না আমার। আমি প্রথম দিন থেকে তৃণমূলে আছি। এঁদের কোনও গুরুত্ব নেই। এঁরা চলে যাওয়ায় দলের কোনও ক্ষতি হবে না। দলের প্রতীক না থাকলে এঁরা কেউ বিধায়ক হতে পারতেন না।’’