নিজস্ব প্রতিবেদক, দুর্গাপুর: ছেলেধরা সন্দেহে রোগীকে বেধড়ক পিটিয়েছিল উত্তেজিত জনতা। আর ৩ দিন পর দেহ মিলল মর্গ থেকে। ঘটনা দুর্গাপুরের। প্রসঙ্গত, বেশ কয়েকদিন ধরেই দুর্গাপুরে রটেছে ‘ছেলেধরা’ গুজব। আর তার জেরেই প্রাণ গেল রোগীর।
বিনন্দ গোপ নামে বছর ২৩- এর যুবকের বাড়ি অন্ডাল থানা এলাকার হরিশপুর গ্রামে। গত ২১ তারিখ জ্বর ও পেটে ব্যথা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে। ২২ তারিখ দুপুর বেলা হাসপাতাল থেকে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায় ওই যুবক। হাতে তখনও লাগানো ছিল সেলাইনের চ্যানেল। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় নিউটাউন থানায় ‘নিখোঁজ’ অভিযোগ দায়ের করে। খবর যায় রোগীর পরিবারের কাছে। হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকেন তারাও। অবশেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে মর্গে পচা-গলা অবস্থায় অন্যান্য বডির সঙ্গে মিলল বিনন্দের দেহ।
এর মধ্যে ঘটে গেছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। ২২ তারিখ বিনন্দ যখন নিখোঁজ হওয়ার পর তাকে দেখতে পাওয়া যায় দুর্গাপুরের কোকওভেন থানা এলাকায়। আমবাগান অঞ্চলে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দেওয়া হয় তাঁকে। সেই ভিডিও ভাইরালও হয়।
এরপরে পরিবারের লোকজন আতঙ্কে বারবার থানায় এসে খোঁজখবর শুরু করতে থাকেন কিন্তু কোন ভাবেই এই তিনদিন কেন জানা গেল না যে বিনন্দের মৃতদেহ মর্গে রয়েছে? কেউ কেউ বলছেন সকালেই তার মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আবার কেউ কেউ বলছেন তাকে উদ্ধার করে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছিল। রাতের অন্ধকারে সে বীরভানপুর গ্রামে ছিল। তাঁর খোঁজে গোটা রাত গ্রামের বাসিন্দারা তল্লাশি চালায় বলে জানা যায়। উদ্ধার করার জন্য বিক্ষোভের মুখে পড়ে পুলিশও। অন্যদিকে পুলিশ জানায়, তাকে দুর্গাপুর বাস স্ট্যান্ড এলাকায় একটি হোটেলের ধারে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। সমগ্র বিষয় নিয়েই রয়েছে ধোঁয়াশা।
তবে ছেলে ধরা গুজব নিয়ে তাঁকে যে মারধর করা হয়েছে সেই ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল। গায়ে রয়েছে প্রচুর আঘাতের চিহ্ন। ওই এলাকার বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে বৃহস্পতিবার দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে ২ জনের পুলিশি হেফাজত ও ৬ জনের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।