ডেস্ক: ঘরোয়া সমস্যা এতদিন পাঁচ কান হয়েছিল। বিবাহ বিচ্ছেদ মামলায় কোর্ট কাছারির চোটে পারিবারিক সমস্যা আর পরিবারের গণ্ডিতে আটকে নেই মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। অশান্তির আগুন দীর্ঘ কয়েক মাস ঘরে ধিকধিক করে জ্বলছিল ঠিকই। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাত থেকে শোভনবাবুর ফ্ল্যাটের নীচে স্ত্রী রত্নাদেবী ধরনা দেওয়ায় তা যেন দাউদাউ করে জ্বলা শুরু করেছে। পারিবারিক অশান্তি কার্যত রাস্তায় নেমে এসেছে এবং সাধারণ মানুষের খোরাক হয়ে উঠছে তা। বিভিন্ন সমস্যার জর্জরিত হয়ে দল ও দলনেত্রীর গুডবুকের বাইরে বেশকিছু দিন আগেই চলে গিয়েছিলেন কলকাতার মেয়র। বৃহস্পতিবারের ঘটনা যেন সব সীমা অতিক্রম করে গেল। রত্নাদেবীর এই কাণ্ডের ফলে শোভনের ভাবমূর্তি এতটাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং দল থেকেও এতটা দূরে তিনি সরে গিয়েছেন যে দলে তাঁর আর জায়গা নেই বলেই ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন শহরের মেয়র।
শোভনের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, মেয়র মনে করছেন দলে থাকার মতো আর অবস্থা তাঁর নেই। কারণ, ব্যক্তিগত সমস্যায় জর্জরিত হয়ে শিরোনামে উঠে আসার পর থেকেই দল এবং প্রশাসন এই দুই থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন মেয়র। আর দলনেত্রীর গুডবুক থেকে নাম বাইরে চলে গেলে যে কী হয় তা অনেকেরই জানা। সেরকমই এই অবস্থায় দলীয় নেতৃত্ব থেকে প্রশাসন, কেউই পাশে এসে দাঁড়াতে চাইছে না তাঁর। এতে রীতিমতো হতাশ মেয়র, দুঃখও পেয়েছেন খুব। তাই দলে থাকার মতো আর অবস্থা তাঁর নেই বলেই মনে করছেন তিনি।
দল বা প্রশাসন যে তাঁর পাশে নেই সেই প্রকৃষ্ট উদাহরণ বৃহস্পতিবার রাতেই পেয়েছিলেন মেয়র। রত্নাদেবী যখন তাঁর ফ্ল্যাটের নীচে ধরনায় বসেছিলেন তখন সাহায্যের জন্য এই পুলিশ অফিসারকে মাঝরাতে ফোন করেন। কিন্তু ওই আইপিএস অফিসারের কাছ থেকেও আশাব্যাঞ্জক উত্তর পান নি তিনি। জনৈক অফিসারের কাছে সাহায্য না পেয়ে আরও এক আইপিএসের দ্বারস্থ হন মেয়র।
একটি প্রথম সারির বাংলা সংবাদপত্রের দাবি, বৃহস্পতিবার রাতে দীর্ঘ টানাপড়েন চলাকালীনই নাকি শোভন তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানান, তিনি হয়তো আর বাঁচবেন না। একই সঙ্গে মেয়রের দাবি, রত্না তাঁকে লাগাতার ‘ব্ল্যাকমেল’ করে যাচ্ছেন, তাঁর কাছেও মাথা নত করবেন না তিনি। শাসকদলের অন্দরমহল সূত্রে অনেকের মতে, শোভনের জন্য ইচ্ছাকৃত এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে যাতে বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করতে হয় তাঁকে। তবে সামনেই মহেশতলা উপনির্বাচন। এর মধ্যে এমন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হবে না যাতে তৃণমূলের অন্দরের ভাঙন চোখে পড়ে। একবার নির্বাচন পর্ব মিটে গেলেই শোভন চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে সিদ্ধান্তে আসা হতে পারে।