রিঙ্কু ভট্টাচার্য, বর্ধমান: ১৯৭০ সালের ১৭ মার্চ, এই দিনেই ঘটেছিল সেই নারকীয় হত্যালীলা। বর্ধমান শহরের প্রতাপেশ্বর শিবতলা লেনের কংগ্রেসী পরিবার সাঁইবাড়িতে। সিপিএমের সমর্থকরা সশস্ত্র অবস্থায় চড়াও হয়েছিলেন ওইদিন সাতসকালে। সাঁইবাড়ির ভেতর ঢুকে খুঁচিয়ে খুন করা হয়েছিল সাঁইবাড়ির দুই ভাই মলয় ও প্রণব সাঁইকে। সেই সময় বাড়িতে আসা গৃহশিক্ষক জীতেন রায়কেও খুন করা হয়েছিল। বর্ধমানের সাঁইবাড়ির এই ঘটনা সেই সময় শুধু বাংলা জুড়েই নয়, শোরগোল ফেলেছিল জাতীয় স্তরের রাজনীতিতেও। সিপিএমের এই নৃশংস্য হত্যাকাণ্ডের নিন্দায় সরব হয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধীও। সাঁই বাড়ির এই ঘটনাকে ঘিরে বারে বারেই রাজনৈতিক তরজা চরমে যেমন উঠেছে, তেমনি সাঁইবাড়ির ঘটনার ওপর রং চড়িয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার রেশ আজও চলেছে সমান ভাবে। প্রায় প্রতিটি ভোটের সময়েই বর্ধমান শহর জুড়ে সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তুলে ধরে বাম বিরোধী দলগুলি। আর এবার তো ভোটের মুখেই সেই কলঙ্কিত দিনটা পড়ে গিয়েছে।
রবিবার সাঁইবাড়ি ঘটনার ৪৯তম বছরটি পালিত হল। এদিন শহীদ বেদিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ সহ তৃণমূল নেতা এবং সাঁইবাড়ির পরিবারের সদস্যরাও। এদিন সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ডের দিনটি বর্ধমানের জেলা কংগ্রেস ভবনেও পালিত করেন কংগ্রেস কর্মীরা। হাজির ছিলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি আভাষ ভট্টাচার্য, কার্য্যকরী সভাপতি কাশীনাথ গাঙ্গুলী প্রমুখরা। এদিন পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ড ঘিরে আয়োজিত সব কটি বাম বিরোধী সভাতেই সিপিএমের এই হত্যালীলাকে গুরুত্ব দিয়ে বোঝানোর জন্য একটি বিষয় তুলে ধরা হয়। তা হল, সাঁইবাড়ির হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সময় একটি শিশুকে কেটে তার রক্ত মাখিয়ে দেওয়া হয়েছিল ভাতের সঙ্গে। বস্তুত, বর্ধমানের সাইঁবাড়ির ঘটনার প্রায় ৪৯ বছর পরও এই ঘটনাকেই সিপিএম ও কংগ্রেসের মধ্যে বিভাজনের ক্ষেত্রে তুরুপের তাস হিসাবে খেলার চেষ্টা আগেও হয়েছে এখনও হচ্ছে। বলতে দ্বিধা নেই এই প্রচারে সব থেকে বেশি এগিয়ে রাজ্যের বর্তমান শাসক দলই।
কয়েকদিন ধরেই রাজ্যে বাম-কংগ্রেস জোট নিয়ে তৎপরতা চোখে পড়ছিল। তা নিয়ে জেলার কংগ্রেসি শিবিরে বেশ ভাল রকমই ক্ষোভ ছড়িয়েছিল। সাঁইবাড়ির রক্তে রাঙা সিপিএমের কোনে প্রার্থীকে কোন রকম সহায়তা করতে রাজী ছিলেন না কংগ্রেস কর্মীরা। তার মধ্যেই ক্ষোভ আরও চরমে ওঠে বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা আসনটিকে সিপিএমের হাতে ছেড়ে দেওয়াকে কেন্দ্র করে। তবে এদিন কংগ্রেসের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় তারা রাজ্যের সব আসনেই প্রার্থী দেবে। এর পড়েই কার্যত হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন জেলার কংগ্রেসি নেতারা। এই সিদ্ধান্ত না নিয়ে যদি আগের সিদ্ধান্তই বজায় থাকত তাহলে এবারেও লোকসভা নির্বাচনে ভোট হারাতে হত কংগ্রেসকে, যেমনটি হয়েছিল ২০১৬ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে। সেক্ষেত্রে তৃণমূল যেমন লাভবান হয়েছিল, এবারেও তেমনই লাভবান হত তারা। বাম কংগ্রেসের জোট এখন না হলেও তৃণমূল কিন্তু সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ড তাদের প্রচারে তুলে ধরেই ভোট চাইতে নেমে পড়েছে, যাতে বাম বা কংগ্রেসকে ধরাশায়ী করা যায় ও বিজেপির বিরুদ্ধে তাদের লড়াইয়ে যেন যতটা সম্ভব বেশি ভোট পাওয়া যায়।