ডেস্ক: রামায়ণ-মহাভারত মানেই নস্টালজিক একটা ব্যাপার৷ আমরা প্রায় সকলেই ছোটবেলা থেকে রামায়ন কিংবা মহাভারত পড়ে বড় হয়েছি। প্রতিটি ভারতবাসীর মধ্যে এই দুই হিন্দু মহাকাব্যের জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত৷ রামায়ন-মহাভারতের সঙ্গে সামাজিক দীবনের অনেক ক্ষেত্রেই প্রচুর মিল খুঁজে পাওয়া যায়৷ গল্পের বইয়ের পাতা হোক, কিংবা টিভি সিরিয়াল, রামায়ন-মহাভারত ছাড়া তা অপূর্ণ থেকে যায়৷ কিন্তু মূল চরিত্রগুলি এবং মূল ঘটনাগুলি বাদ দিয়ে রামায়ন-মহাভারতের নেপথ্যে অনেক কৌতুহলী তথ্য রয়েছে, যা আমাদের অনেকেরেই অজানা।রাম নবমীর ঠিক আগে এমনই কিছু অজানা তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করা হল৷
(১) রামভক্ত হনুমানের লঙ্কাকাণ্ডের ঘটনা আমরা সকলেই জানি৷ কিন্তু লঙ্কাকাণ্ডে আসলে যে ছিল একটি অভিশাপ তা অনেকেরই অজানা৷ যা বহুদিন আগে রাবণকে দিয়েছিলেন শিবের সেবক নন্দী।
(২) আপনি কী জানেন চোদ্দো বছরের বনবাসে রামানুজ লক্ষ্মণ এক মুহূর্তের জন্য ঘুমোননি! বনবাসে যাওয়ার আগে লক্ষ্মণ নিদ্রাদেবীর কাছে বর চেয়েছিলেন, যাতে এই ১৪ বছরে তাঁর ঘুম না আসে। নিদ্রাদেবী শর্স সাপেক্ষে সেই বর দেন৷ শর্ত অনুযায়ী, লক্ষ্মণ পত্নী উর্মিলাকে ১৪ বছর ঘুমিয়ে কাটাতে হয়।
(৩) রামায়ন ও মহাভারতের মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে৷ পুরাণ অনুযায়ী, রামায়ণের লক্ষ্মণই হলেন মহাভারতের বলরাম। রামায়ণে শ্রীরামচন্দ্রের ছোট ভাই হিসেবে গোটা জীবনই তাঁকে আদেশ পালন করতে হয়েছিল। তাই পরবর্তী দ্বাপর যুগে বিষ্ণু অবতার কৃষ্ণের বড়ভাই হিসেবে তিনি জন্মগ্রহণ করেন এবং তাঁর অগ্রজ হওয়ার ইচ্ছেপূরণ হয়। এছাড়া রামায়ণের বালি মহাভারতের জরা নামক ব্যাধ, যিনি দ্বাপর যুগে কৃষ্ণের হত্যার কারণ হয়েছিলেন।
(৪) রামের আগেই দেহত্যাগ করেছিলেন লক্ষ্মণ। যমরাজকে দেওয়া রামের একটি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতেই তিনি নিজে সরযূ নদীর তীরে গিয়ে আত্মত্যাগ করেন।
(৫) রামের দীর্ঘায়ু কামনায় সীতা সিঁথিতে সিঁদুর পরতেন৷ বিষয়টি জানতে পারেন হনুমান৷ তখন মহাবীর হনুমান সারা গায়ে ‘কুমকুম’ বা সিঁদুর মাখেন। মেটে সিঁদুরের রঙে তাঁর গায়ের রং হয়ে ওঠে কমলা। এজন্যই হনুমানের আর এক নাম বজরংবলী৷ কারণ, বজরং কথার অর্থ কমলালেবু।
(৬) নারদ মুনির প্ররোচনায় একবার ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ প্রয়োগ করে হনুমানকে বধ করতে গিয়েছিলেন রাম। তখনই হনুমান একমনে রামনাম জপ করতে থাকেন। আর সেই নামজপেই অকেজো হয়ে যায় সবচেয়ে শক্তিশালী দৈবাস্ত্রটি৷
(৭) বাল্মীকি ছাড়া অন্যান্য বহু রামায়ণের মতে, রাবনের বোন শূর্পনখা বিবাহিত ছিলেন৷ এবং রাম যেহেতু তাঁর স্বামী ‘দুষ্টবুদ্ধি রাক্ষস’-কে হত্যা করেন, তাই শূর্পনখা প্রতিশোধ নিতে রাবণকে সীতাহরণের প্ররোচনা দেন।
(৮) রাম-রাবণের শেষ যুদ্ধে রামের জয়ের পিছনে বালি-পুত্র অঙ্গদের বিরাট অবদান ছিল। রাবণ যুদ্ধে যাওয়ার আগে যজ্ঞ করছিলেন। যজ্ঞ নষ্ট করার জন্য সেখানে উপস্থিত হয় অঙ্গদ এবং বানরসেনার কয়েকজন কিন্তু কিছুতেই রাবণের মনোযোগ নষ্ট করতে পারছিল না। শেষে অঙ্গদ রানি মন্দোদরীর বিনুনি ধরে টানাটানি শুরু করে। তাও রাবণ অটল ছিলেন। কিন্তু মন্দোদরী রাবণকে ব্যঙ্গ করে বলেন যে, রাম তাঁর স্ত্রী’র জন্য এত কিছু করছেন আর রাবণ তাঁর স্ত্রীকে এই বানরকুলের হাত থেকে রক্ষা করতে পারছেন না। এই কথা শোনার পরেই রাবণ যজ্ঞভঙ্গ করে অঙ্গদ ও দলবলকে তাড়ান৷ যার ফলস্বরূপ, যুদ্ধে পরাজয় লাভ করতে হয়েছিল রাবনকে৷
(৯) রামায়ণ অনুসারে রাম নবমীর দিনে জন্মগ্রহণ করেন শ্রীরামচন্দ্র। কিন্তু জানেন কি নারদের অভিশাপে জন্ম হয়েছিল রামের? তার জন্মের পেছনে রয়েছে এক চিত্তাকর্ষক কাহিনী।
এক সুন্দরী রাজকন্যার প্রেমে পড়েন নারদ। সেই রাজকন্যার তখন স্বয়ম্বরের আয়োজন চলছিল। নারদ সুদর্শন না হওয়ায় বিষ্ণুর কাছে অনুরোধ জানান, যাতে স্বয়ম্বরের সময় বিষ্ণু নিজের রূপ নারদকে দান করেন। বিষ্ণুর আশীর্বাদ পেয়ে স্বয়ম্বর সভায় যান দেবর্ষি৷ কিন্তু রাজকন্যা বরমাল্য হাতে তার সামনে এসে হো হো করে হেসে ওঠেন। আসনে নারদের মুখের জায়গায় একটা বানরের মুখ বসিয়ে দিয়েছিলেন নারায়ণ।
বিষ্ণু এই ঠাট্টায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে নারদ তাঁকে অভিশাপ দেন৷ যেভাবে নিজের প্রেমকে কাছে না পেয়ে তিনি ব্যাথিত হয়েছেন, সেরকমই একদিন নিজের স্ত্রীকে হারিয়ে দুঃখে কাতর হতে হবে বিষ্ণুকে। রাম-রূপে জন্মগ্রহণ করে সীতার সঙ্গে চির বিচ্ছেদের বিরহ ভোগ করেছেন নারায়ণ।