নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আলিপুর প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের জমি বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু করে দিল নবান্ন। চলতি বছরের মধ্যেই ধাপে ধাপে এই জমি বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী রাজ্য সরকারি কর্মীদের আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে বর্ধিত বেতন ও ভাতা মেটাতে প্রচুর টাকা প্রয়োজন। সেই টাকার যোগান দিতেই বহু ইতিহাসের সাক্ষী আলিপুর প্রেসিডেন্সি জেলের জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত কিনা সরকারের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে উঠতে শুরু করেছে সেই প্রশ্নও।
আলিপুর ও প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার বারুইপুরে নতুন ঠিকানায় সরে যাওয়ার আগে থেকেই সংশোধনাগার চত্বরের বিপুল পরিমাণ জমি ‘উন্নয়নমূলক কাজে’ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। যার নাম দেওয়া হয় আলিপুর ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে কলকাতা পুরসভাকে ওই প্রকল্প রূপায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কলকাতা পুরসভা একজন বিশিষ্ট স্থপতিকে দিয়ে ওই প্রকল্পের মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী হেরিটেজ অংশসহ জেলের প্রায় ১০০ একর জমিকে আটটি অংশে ভাগ করা হয়। তারমধ্যে প্রাথমিকভাবে সাড়ে তিন একর জমি নিলামে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বর্তমানে মুখ্যসচিবের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। সেই অনুমোদন পেলেই টেন্ডার ডেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জমি বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু করা হবে বলে নবান্ন সূত্রে খবর। এই অংশের জমিতে পাঁচতলা বাণিজ্যিক আবাসন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। জমির চরিত্র ও গুরুত্ব অনুযায়ী বাকি জমিও ধাপে ধাপে বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।
প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘হেরিটেজ অংশ এবং সরকারি দফতর বাদ দিয়ে কিছুটা জমি সরকারি প্রকল্পের জন্য হাতে রাখা হবে। বাকি জমি বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য বেসরকারি সংস্থার কাছে বিক্রি করা হবে। আলিপুর ও প্রেসিডেন্সি জেল এবং তার লাগোয়া দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনিক সদর দফতর মিলিয়ে মোট ১০০ একর জমি উন্নয়নের কাজে ব্যবহারের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে।’ কলকাতা পুরসভা ও রাজ্যের ভূমি সংস্কার দফতরের হিসাব অনুযায়ী, ওই সাড়ে তিন একর জমি বিক্রি করে রাজ্য সরকারের আয় হবে কমপক্ষে ১৫ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া জমির ডেভলপমেন্ট ফি বাবদ আরও কয়েকশো কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এই জমি বিক্রির মাধ্যমে বেহাল রাজ্য কোষাগারের আর্থিক ঘাটতি অনেকটাই পূরণ হবে বলে রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা মনে করছেন। রাজ্য সরকারি কর্মীদের বাড়তি বেতন ও ভাতার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান এর ক্ষেত্রেও তা কাজে আসবে। কিন্তু নিরাপত্তা ও ঐতিহ্যের দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ওই এলাকার জমি প্রাকার সংস্থানের জন্য বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তবে নিরাপত্তা ও ঐতিহ্যের দিক খতিয়ে দেখেই পরিকল্পনামাফিক জমি বিক্রি করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন।