ডেস্ক: শুক্রবার ৬৯তম প্রজাতন্ত্র দিবস পালন হল দেশজুড়ে। ঠিক তার আগের দিন পদ্ম পুরস্কার কারা পাচ্ছেন সেই ঘোষণাও করে দিল কেন্দ্রীয় সরকার। পদ্মভূষণ পুরস্কারে সম্মানিত হচ্ছেন ভারতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। পদ্মবিভূষণে সম্মানিত করা হবে ইল্লাইয়া রাজাকে।
পদ্ম পুরস্কার প্রাপ্তদের তালিকায় রয়েছেন এ রাজ্যের পাঁচজন। পদ্মশ্রী পাচ্ছেন সমাজকর্মী সুভাষিণী মিস্ত্রি, সুধাংশু বিশ্বাস। এছাড়াও সঙ্গীতজ্ঞ বিজয় কিচলু, সাহিত্যিক কৃষ্ণবিহারী মিশ্র ও বৈজ্ঞানিক অমিতাভ রায় পেতে চলেছেন এই বিরল সম্মান। সমাজের অবদানের নিরিখে কেউই পিছিয়ে নেই এই পাঁচ পদ্মশ্রী প্রাপকদের মধ্যে। কিন্তু চরম প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে থেকেও দৃষ্টান্ত হয়ে বাকি সকলের থেকে নিজেকে একটু হলেও আলাদা করে ফেলেছেন সুভাষিণী মিস্ত্রি।
পদ্মশ্রী পাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু সুভাষিণী মিস্ত্রি পরিচিত এক সব্জি ব্যবসায়ী হিসাবে। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের পত্নী সুভাষিণী নিজের স্বামীকে বিনা চিকিৎসায় হারান। পয়সার অভাবে মুমূর্ষু স্বামীর চিকিৎসা করাতে পারেন নি একসময়। তারপর থেকেই কেবল আত্মবিশ্বাস এবং অদম্য জেদকে সঙ্গী করে হাসপাতাল তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। যাতে ভবিষ্যতে তাঁর মতো পরিণতি কারও না হয়। কিন্তু টাকা কোথায়? কারও কাছে চাইতে গেলে বঞ্চনা ছাড়া আর কিছুই জুটতো না সুভাষিণীর পোড়া কপালে। শেষ পর্যন্ত অনেক ভেবে কোনও কুলকিনারা না পেয়ে ছেলেমেয়েকে রেখে আসলেন অনাথ আশ্রমে। এরপর ধাপার মাঠ থেকে সব্জি তুলে নিজে বিক্রি করা শুরু করলেন বাজারে। অন্যদিকে, তাঁর ছেলেমেয়ে অনাথ আশ্রমে থেকেই চালিয়ে গেল পড়াশুনা।
এরপরের ঘটনাগুলো অনেকটা গল্পের মতো। বাবাকে অকালে হারানোর বেদনা এবং অধ্যাবসায়কে সঙ্গী করে সুভাষিণীর ছেলে অজয় মিস্ত্রি হয়ে উঠলেন চিকিৎসক। দীর্ঘ ২০ বছর লড়াই চালিয়ে সব্জি বিক্রির টাকা একটু একটু করে জমিয়ে অবশেষে জমিও কিনে ফেলেন সুভাষিণী। সেখানেই ১৯৯৩ সালে হাসপাতাল তৈরির কাজ শুরু হয়। অনুদানের টাকায় শেষমেষ তিন বছর পর গড়ে ওঠে হিউম্যানিটি হসপিটাল। প্রায় বিনামূল্যে যেখানে চিকিৎসা পেয়ে থাকেন কয়েকশো রোগী। এভাবেই হাঁসপুকুর ছাড়িয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে সুভাষিণীর নাম। শেষপর্যন্ত তাঁর এই অনবদ্য কৃতিত্বের জন্যই তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করার সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্রীয় সরকার।