ডেস্ক: পৃথিবীর শক্তিশালী দেশগুলির মধ্যে ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতিযোগীতা চিরকালীন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই সকলে নিজেদের সামরিক ভাণ্ডারের আখের গোছানোর কাজে মন দেয়। ‘ঠাণ্ডা যুদ্ধ’-এর পর তিন দশক পেরিয়ে গেলেও আন্তর্জাতিক স্তরে এখন পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রগুলির আধিপত্যই বেশি লক্ষ্য করা যায়। সারা বিশ্বে যে দেশগুলি মিলে পরমাণু ক্লাব গঠন করেছে তারা হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, চিন, ভারত, পাকিস্তান, ইজরায়েল এবং উত্তর কোরিয়া। সবগুলি দেশ মিলিয়ে এই মুহূর্তে বিশ্বে মজুত রয়েছে প্রায় ১৫,৮৫০টি পরমাণু অস্ত্রবোঝাই বোমা।
কিন্তু এই সংখ্যক পরমাণু বোমার মাত্র ১০ শতাংশ রয়েছে বেশিরভাগ দেশগুলির দখলে। স্টকহোমের ‘ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট’ সূত্রে জানানো হয়েছে, ১৫,৮৫০টি অস্ত্রের মধ্যে ৯০ শতাংশই রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের দখলে। এই ঘোষণার পরই পরমাণু ক্লাবে থাকা অন্যান্য দেশগুলির মাথায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। চিন্তা অবশ্য আরও বাড়িয়েছেন উত্তর কোরিয়ার নায়ক কিম জং উন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর শত্রুতা ও এর পরিপ্রেক্ষিতে একের পর ব্যালিস্টিক মিসাইল নির্মাণ এবং পরীক্ষার ফলে পিয়ংইয়ং-এর অস্ত্রভাণ্ডার যে ফুলেফেঁপে উঠছে তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
ইতিমধ্যেই মার্কিন প্রশাসনের চাপ বাড়িয়ে বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ‘আমাদের দেশ এমন একটি পরমাণু মিসাইল বানিয়েছে যা শত্রুর রেডারে ধরা পড়ে না এবং পৃথিবীর যে কোনও কোণায় হামলা চালাতে সক্ষম।’ পুতিনের পাল্টা দিয়ে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে আরেক বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, ‘আমেরিকাবাসীরা যেন নিশ্চিতে থাকেন। যে কোনও রকমের পরমাণু হামলা রোধ করতে মার্কিন সেনাবাহিনী তৈরি।’ তবে এই বাক যুদ্ধের ফলে চিরকালীন তিক্ত রাশিয়া-আমেরিকার সম্পর্ক যে আরও তেতো হবে তা অবশ্যম্ভাবী।
স্টকহোমের ‘ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট’ জানাচ্ছে, চলতি পরিস্থিতিতে হয়তো যুদ্ধের সম্ভাবনা নেই। কিন্তু পরমাণু বোমা মজুত করে রাখার ক্ষেত্রে কোনও দেশই পিছিয়ে থাকতে চাইছে না। একই সঙ্গে পুরনো অস্ত্রগুলিকে কীভাবে আরও উন্নত মানের তৈরি করা যায় সেই নিয়েও অনবরত গবেষণা চলছে। যদিও ২০১১ সাল থেকেই অস্ত্র আমদানি এবং নির্মাণের উপর নিয়ন্ত্রণ আনা শুরু করেছে এই দুই দেশ। এই বিপুল অস্ত্রভাণ্ডার অবশ্য বাকি দেশগুলির জন্য বিপদ ডেকে আনবে না, এমনটাই জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর। তাদের দাবি, এই পারমাণবিক ক্ষমতা বাকি দেশগুলিকে পরমাণু আক্রমণের থেকে রুখবে। মোদ্দাকথা, বাকি দেশগুলির তুলনায় পরমাণু শক্তির নিরিখে অনেকটাই এগিয়ে রাশিয়া ও আমেরিকা। একে অপরকে বিক্ষিপ্ত বিভিন্ন হুঁশিয়ারি দিলেও আপাতত যুদ্ধের সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে ক্ষমতা বৃদ্ধির দৌড়ে একই ভাবে এগিয়ে যাবে রাশিয়া ও আমেরিকা।