মহানগর ওয়েবডেস্ক: অভিযোগ ভুরিভুরি, একে অপরের প্রতি বাড়ছে অবিশ্বাস। সব মিলিয়ে একুশের নৌকায় তৃণমূলের হাল ধরে রীতিমতো পস্তাচ্ছেন রাজনীতির গুরু প্রশান্ত কিশোর। একই রকমভাবে প্রশান্ত কিশোরের কর্মপদ্ধতিতে যারপরনাই অখুশি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানা গিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ঘনিষ্ঠ মহলে প্রশান্ত কিশোরের কাজেকর্মে ব্যাপক বিরক্তি প্রকাশ করেছেন মমতা। আর এই মতানৈক্যের জেরে কিশোরের মস্তিষ্কপ্রসূত দিদিকে বলোতেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে ব্যাপকভাবে।
যেভাবে বিজেপির দাপট রাজ্য জুড়ে বেড়ে চলেছে তা সামাল দিতে ও একুশের গড় বাঁচাতে প্রশান্ত কিশোরকে বাংলায় ডেকেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শোনা যায় প্রায় ৪৫০ কোটি টাকায় তাঁর সঙ্গে রফাও করেছেন তিনি। যদিও তৃণমূলের তরফে টাকার অঙ্ক নিয়ে মুখ খোলা হয়নি। তবে কয়েক মাস কাজ করার পর প্রশান্ত কিশোরের প্রতি অবিশ্বাস জন্ম নিচ্ছে তৃণমূলের অন্দরে। সীমান্তবর্তী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে বাঁশ করেন বহু ভাষাভাষীর মানুষ। সেখানে প্রশান্ত কিশোরের পরিকল্পনা কতখানি টেকসই হবে তা নিয়ে এখন থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পাশাপাশি, মধ্যরাত হোক বা গভীর রাত, মাঝে মাঝেতো ভোর রাতেও প্রশান্ত কিশোরের ছেলেদের থেকে বিধায়কদের কাছে ফোন আসছে জনসংযোগ বাড়ানো ও নিজের এলাকাকে আরও বেশি করে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য। এহেন ঘটনায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ জনপ্রতিনিধিরা। আবার কিছু কিছু পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশান্ত কিশোরের কথা শুনছেন না। তাঁকে রীতিমতো উপেক্ষাও করছেন। এ রাজ্যে প্রশান্ত কিশোরের বুদ্ধি খাটবে না এমনটা ধরে নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তলে তলে নিজের মতো করে ফের গোছাতে শুরু করেছেন তিনি। কিন্তু গোটা বিষয়টি অন্য ছকে চলার পর নতুন করে তা ফের তুলে নেওয়া আরও বেশি সমস্যা জনক সেটাও বুঝতে পারছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
এর পাশাপাশি, প্রশান্ত কিশোরও মমতার কাজে কর্মে রীতিমতো ক্ষুব্ধ। তাঁর বহু কথা মমতা শোনেননি। তবে শুধু সেই জন্য নয়, আগ বাড়িয়ে মমতা এমন কিছু করে বসছেন যার নির্দেশ প্রশান্ত কিশোর দেননি। ফলে না জানিয়ে তিনি কোনও কর্মসূচী নিলে সে দায় প্রশান্ত কিশোরের উপর বর্তাকে না এমনটাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে পিকের মহল থেকে। যেমন, এনআরসি বিরোধী অভিযানে সিঁথি থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত হেটেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর জেরে রাস্তার দুপাশে যে বিশাল ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছিল তাঁর জন্য খরচ পড়ে ১৫ লক্ষ টাকা। এই খবর প্রশান্ত কিশোর পাওয়ার পর রীতিমতো ক্ষুব্ধ হন তিনি। সরকারী চাকরি নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তিনি সরাসরি করে বসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। অমিত মিত্রের তথ্যের বিভ্রান্তি নিয়েও তাঁকে কথা শুনিয়েছেন প্রশান্ত কিশোর। সব মিলিয়ে তুমুল টালমাটাল পরিস্থিতি চলছে তৃণমূল ও প্রশান্ত কিশোরের অন্দরে। তাতে আবার ইন্ধন যোগাচ্ছেন জেলা স্তরের নেতারা। প্রশান্ত কিশোরের দেওয়া টাস্কে তারাও রীতিমতো ক্ষুব্দ। প্রশান্ত কিশোরের মহল থেকে জানা যাচ্ছে, তিনি যদি জানতেন এত বিশাল দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি তাহলে এ রাজ্যে কখনই পা বাড়াত না টিম পি কে। তবে চুক্তি যখন হয়েছে কাজ তো করতেই হবে। কিন্তু সম্পর্কে যেভাবে চিড় ধরেছে তাতে ২১ সামলাতে এই ফুটো হয়ে জল ঢুকতে থাকা নৌকা রাজনীতির নদীতে আর কতদিন ভেসে থাকবে তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।