ডেস্ক: ব্যক্তিগত হোক, বা অন্যকিছু। গত বেশ কয়েকদিনে দলীয় ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ঔদাসিন্য চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। দলের তরফে বারে বারে সতর্ক করা সত্ত্বেও ফল বিশেষ হয়নি। তাই দীর্ঘদিনের তৃণমূলের সৈনিকের সঙ্গে সম্পর্ক শেষের পথে অনেকখানিই এগিয়ে গিয়েছে দল। দলীয় সূত্রে খবর, বহুদিন ধরে যা শুধুমাত্র একটি সুতোর উপর টিকে ছিল তা পাকাপাকি ভাবে এবার ছেঁড়ার উপক্রম হয়েছে।
গত বেশ কয়েকদিনে বহুবার তাঁর উপর ক্ষুব্ধ হয়েছে দল। প্রথমত, কলকাতার মেয়র হওয়া সত্ত্বেও ইদানিংকালে বেহিসেবি জীবনযাপন শুরু করেছেন মেয়র। স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর ঝামেলা দল সহ সাধারণ মানুষের কাছেও তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। যাতে অত্যন্ত অসন্তুষ্ট দল। প্রশাসনিক কাজে তাঁর ঔদাসিন্য ছাড়াও শুক্রবার কোরকমিটির বৈঠকে যোগ না দেওয়ায় তাঁর উপর বেজায় অসন্তুষ্ট হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় সূত্রে মনে করা হচ্ছে, দলের কলেজ শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপার রাজ্য কমিটি থেকে অধ্যাপিকা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের অপসারণ নিয়ে ক্ষুব্ধ মেয়র কোর কমিটির বৈঠকে উপস্থিত হননি। এত ঝামেলার মধ্যে শনিবার ফের ঝামেলা বাধান শোভনবাবু। শনিবার পুরসভার ২০১৮- ১৯ অর্থবর্ষের আর্থিক বাজেট পেশ করেন মেয়র সেখানেও অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। তাঁর অবর্তমানে চেয়ারপার্সন মালা রায় মালা রায় বাজেট পুস্তিকা বিলির পরামর্শ দেন। মেয়রের অনুপস্থিতিতে এই বাজেট অধিবেশন নিয়ে হইচই শুরু করেন বিরোধীরা। তার বহু পরে সভাকক্ষে ঢোকেন মেয়র।
গত কয়েকদিন ধরে মেয়রের এইসব কারনের জন্য বেজায় অসন্তুষ্ট শীর্ষ নেতৃত্ব। দলীয় ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ঔদাসিন্য চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। বারে বারে দলের তরফে দূত পাঠানো সত্ত্বেও সতর্ক হননি তিনি। বরং কাজের ঔদাসিন্য তাঁর আরও বেড়েছে। ফলে দলের অন্দরেও বেড়েছে অস্বস্তি। তৃণমূলের অন্দরমহল সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয়গুলি দেখার পর তাঁকে প্রথম সতর্ক করা হয় তাঁর নিরাপত্তা কমিয়ে। আগে যেখানে জেড প্লাস ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পেতেন তিনি, তা কমিয়ে জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দেওয়া হয় তাঁকে। তাতেও কোনও ভ্রূক্ষেপ দেখা যায়নি শোভনের। তাই বাধ্য হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে এবার চরম সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আলোচনা শুরু করেছে দল।
উল্লেখ্য, বর্তমানে কলকাতা পুরসভার মেয়র পদের পাশাপাশি তাঁর হাতে রয়েছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দফতর। মেয়র হওয়ার সঙ্গেই তিনি আবাসন, দমকল ও পরিবেশমন্ত্রী। একইসঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগলা জেলা তৃণমূলের সভাপতিও তিনি। দলের তরফে মনে করা হচ্ছে, এবার মেয়র ও মন্ত্রীত্ব দুইই যেতে বসেছে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। হারাতে হতে পারে দক্ষিণ ২৪ পরগলা জেলা তৃণমূলের সভাপতির পদও।