নিজস্ব প্রতিবেদক, ঘাটাল: আরও কাছাকাছি, আরও কাছে এস। কিন্তু সেই কাছে আসতে গিয়েই যে হয়ে গেল বিপত্তি। ধরা পড়ে যেতে হল গ্রামেরই লোকেদের হাতে। তারপর মারধর তো জুটলই, সঙ্গে জুটল বিয়ের শাস্তি। তার জেরে একজনেরই বউ পেয়ে গেল জলজ্যান্ত দুইখানি স্বামী। একেবারে যেন মর্ডান দ্রৌপদী। না একালের কোন মহাভারত নয়, গৃহবধূর কপালে এই জোড়া স্বামী জোটার ঘটনাটি ঘটেছে এই বাংলারই মেদিনীপুরের মাটিতে। যে মেদিনীপুরের মাটি থেকে উঠে এসে বিদ্যাসাগর মশাই রীতিমর লড়াই করে বিধবা বিবাহ আইন পাশ করাতে সক্ষম হয়েছিলেন। যে গৃহবধূর ‘জোড়া স্বামী প্রাপ্তি’ ঘটেছে তিনি অবশ্য বিধবা নন, তার সোয়ামী এখনও জীবিত আছেন। তবুও গৃহবধূ ধরা দিয়েছেন অন্য কারোর বাহুবন্ধনে। তার তাতেই ঘটেছে যাবতীয় বিপত্তি।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল থানার ধসাচাঁদপুর গ্রামে যে গৃহবধূকে নিয়ে এই ঘটনা ঘটেছে তার স্বামী সোনার কাজ করেন। কাজের সুত্রেই তাকে থাকতে হয় ভিন রাজ্যে। এদিকে বউ থাকে গ্রামে। আবার থাকলেই তো শুধু হবে না, তার খিদে আছে, চাহিদাও আছে। কিন্তু সে সব মেটাবে কে? অতৃপ্তি আর একাকীত্ব যখন ওই গৃহবধূর জীবনে জাঁকিয়ে বসেছে ঠিক সেই সময়েই তার জীবনমঞ্চে আবির্ভাব ঘটল গ্রামেরই এক যুবলের। ঘটনাচক্রে আবার সেই সোনার কাজের সঙ্গেই জড়িত। তাই দুইয়ে দুইয়ে চার হতে সময় লাগেনি। গৃহবধূর উষর জীবনে সবুজের ঢেউ তুলতে বেশি দেরি করেনি কাজ থেকে ছুটি নিয়ে গ্রামে আসা ওই যুবক। কিন্তু তাদের এই প্রেমগাথা গ্রামেরই অন্দরে কানাকানি জানাজানি হতে বেশি সময় লাগেনি। আদালত যতই বলুক না কেন পরকীয়া বৈধ, বাস্তবে ধসাচাঁদপুর গ্রামের মানুষ পরের বউকে অন্য কারোর সঙ্গে পীরিত করতে দেখে কিছুতেই তা মেনে নিতে পারছিল না। তার জেরেই ফাঁদ পেতে হাতানাতে ধরে যুগলকে শাস্তি দিতে সালিশি সভাই বসিয়ে দিলেন তারা।
সোমবার সন্ধ্যায় প্রতিবেশী বৌদির সঙ্গে ওই যুবককে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে গ্রামবাসীরা। তারপরই তাদের তাদের ধরে প্রথমে দড়ি দিয়ে গাছে বেঁধে রাখে। তাদের নিয়ে বসে গ্রামের মোড়লদের সালিশি সভা। সঙ্গে চলে চড় থাপ্পড়ও। এরপরই মোড়লদের নির্দেশে, গ্রামের পরিবেশ সুস্থ রাখতে, ওই গৃহবধূর সঙ্গে যুবকের মালা বদল করিয়ে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। জানা গিয়েছে ওই গৃহবধূর যেমন একটি মেয়ে রয়েছে তেমনি ওই যুবকের পরিবারের সঙ্গে গৃহবধূর পরিবারের সুসম্পর্কও রয়েছে। তবে দুইজনের পরিবার এটিকে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছে। যদিও স্থানীয়দের দাবি-এই সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। যুবকের মোবাইলে দুজনের বেশ কিছু ঘনিষ্ঠ মুহুর্তের ছবিও পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু এখন সবথেকে বড় প্রশ্ন, বউ তুমি কার? সাতপাকে বাঁধা পড়া স্বামীর নাকি গ্রামবাসীদের ধ রে বেঁধে বিয়ে দেওয়া যুবকের? উত্তরটা কিন্তু অজানাই। কাজেই মর্ডান দ্রৌপদী জিন্দাবাদ।